Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:09 am

ধনীদের সম্পদে করছাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বর্তমানে সম্পদকর আইন কার্যকর নেই। সেজন্য ধনী ব্যক্তিরা আয়কর ফাঁকি দিতে আয়কর রিটার্নে যেসব সম্পদে কর নেই, সেসব সম্পদ বেশি দেখিয়ে থাকেন। অনেকেই কর ফাঁকি দিতে সম্পদ কিনে রাখেন। বছর বছর সম্পদের মূল্য বাড়লেও সরকার তা থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারে না। ফলে ধনীরা সম্পদ কিনে কর ফাঁকি দিলেও সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে ধনীদের করছাড় দিয়ে আসছে। তবে সম্পদকরের পরিবর্তে ব্যক্তিশ্রেণির বিত্তশালী করদাতারা আয়করের একটি নির্দিষ্ট হারে সারচার্জ প্রদান করে থাকেন। কয়েক বছর ধরে বিধানটি কার্যকর রয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, কিন্তু তারা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। ফলে প্রদেয় আয়কর কম হওয়ায় তাদের তেমন কোনো সারচার্জও প্রদান করতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ কোটি টাকা বা তার অধিক নিট সম্পদ রয়েছে, এমন করদাতাদের নিট সম্পদের ওপর শূন্য দশমিক এক শতাংশ হারে অথবা প্রদেয় করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া সারচার্জের নিন্মসীমা বর্তমানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে বর্তমানে নিট পরিসম্পদের মূল্য তিন কোটি টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জ তিন হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া ১০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জ দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। সারচার্জের এ হারও অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো সারচার্জ নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য করা হয়েছে। তিন কোটি টাকার অধিক কিন্তু পাঁচ কোটি টাকার অধিক নয় এমন ক্ষেত্রে প্রদত্ত করের ওপর ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। পাঁচ কোটি টাকার অধিক, কিন্তু ১০ কোটি টাকার অধিক নয় এমন ক্ষেত্রে বিদ্যমান সারচার্জের হার ১৫ শতাংশ দিতে হচ্ছে। ১০ কোটি টাকার অধিক, কিন্তু ১৫ কোটি টাকার অধিক নয় এমন ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। ১৫ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ২০ কোটি টাকার অধিক নয় এমন ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। ২০ কোটি টাকার অধিক যে কোনো অঙ্কের জন্য ৩০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে মাত্র ১১ হাজার ব্যক্তির সম্পদের মূল্য দুই কোটি টাকার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক লাখ চার হাজার বাড়িওয়ালা আছেন, যারা কর দেন না। অথচ বেশিরভাগ বাড়িওয়ালার সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য দুই কোটি টাকার কম নয়। সর্বশেষ হিসাবে, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী সবচেয়ে বেশি আবাসন ব্যবসায়ীরা। তারা কর অঞ্চল-৫-এর করদাতা। গত অর্থবছরে এ কর অঞ্চলের ৭৮৫ জন করদাতা তাদের সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি টাকা বেশি বলে দেখিয়েছেন। এরপর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার করদাতারা বেশি সম্পদশালী। কর অঞ্চল-৬-এর বা ধানমন্ডি, জিগাতলা, কলাবাগান, পান্থপথের বাসিন্দা যেমন ৭৫৬ করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন।
বড় করদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩০৬ জন সারচার্জ দিয়েছেন। তারা বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) করদাতা। তারা বড় বড় কোম্পানির মালিক। এলটিইউ সূত্রে জানা গেছে, এলটিইউর করদাতারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালক হওয়ায় তারা প্রতিষ্ঠানের বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য, এলটিইউতে নিবন্ধিত করদাতা আছেন ৭০৬ জন। সারা দেশের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই সর্বোচ্চ সাত হাজার ৭৪৪ জন আছেন, যাদের সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি টাকার বেশি। একইভাবে সবচেয়ে কম সম্পদের মালিক রংপুর বিভাগে, মাত্র ৬৭ জন। এছাড়া বিভাগীয় হিসাবে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৭৪৮ জন, খুলনায় ৩০৬ জন, রাজশাহীতে ৯০ জন, বরিশালে ৮৬ জন, সিলেটে ২৩৪ জন, কুমিল্লায় ২৫৫ জন, ময়মনসিংহে ৭০ জন এমন সম্পদধারী আছেন।