ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ নিতে হবে

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ মানুষ শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে যেসব কারণে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে থাকে, তার মূলে রয়েছে বৈষম্য। এমনকি বৈষম্য হ্রাসের জন্য বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্রেও বিক্ষোভ হতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ছাত্র আন্দোলনের সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে, তার মূলেও রয়েছে বৈষম্য। সেই বৈষম্য হ্রাসের দাবি আদায়ের সংগ্রামে প্রাণ ঝরেছে অনেকের। কাজেই যে কোনো ধরনের বৈষম্য হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। এই বৈষম্য হ্রাস করার জন্য সরকার একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেই আইনের খসড়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ আইনটি দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় সংসদে অনুমোদন হওয়া আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘অক্সফামের প্রতিবেদন: ১০ বছরে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে ৪২ লাখ কোটি ডলার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সঙ্গে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের ব্যবধান আরও বেড়েছে। গত এক দশকে এই ১ শতাংশ ধনী আরও ৪২ ট্রিলিয়ন বা ৪২ লাখ কোটি ডলার সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদ আহরণের চেয়ে তা ৫০ শতাংশ বেশি।

এখানে মূলত বৈশ্বিক বৈষম্যের পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও ধনী ও দরিদ্র্যের মধ্যে বৈষম্যের ব্যাপকতা দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য অনুসারে, বৈষম্য পরিমাপের বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল জিনি সহগ সূচকে দেখা গেছে বৈষম্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের তুলনার ২০২২ সালে এ বৈষম্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ বৈষম্য কমানোর জন্য সর্বোত্তম পদক্ষেপ হচ্ছে ধনীদের ওপর করের ভার বাড়িয়ে দেয়া।

কিন্তু বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা এখনও জনবান্ধব নয়। এখানে করকাঠামো এমনভাবে সাজানো রয়েছে, যার মাধ্যমে ধনীরা আরও বেশি ধনী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজেই এই কর কাঠামোতে সংস্কার সাধন করা একান্ত আবশ্যক। বাংলাদেশে ২০৪১ সালে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আবশ্যিকভাবে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার আয় ও সম্পদ বৈষম্য হ্রাস করতে হবে। আর সেটি করতে হলে একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা হচ্ছে প্রত্যক্ষ করের সংগ্রহ বাড়ানো। কিন্তু বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ এখনও পরোক্ষ কর নির্ভর। এ ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বৈষম্য হ্রাসের জন্য সম্পদশালী ও বেশি আয়ের মানুষের ওপর করহার বাড়াতে হবে এবং নিম্নআয়ের মানুষের রোজগারের সুযোগ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০