ধর্মঘটই কি একমাত্র পন্থা?

এক অদ্ভুত দেশে বাস করছি আমরা! কথায় কথায় ধর্মঘট। কিছু ব্যবসায়িক বা পেশাগত গোষ্ঠীর কাছে যেন দেশটা জিম্মি। কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ময়মনসিংহের বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিলেন। অনিয়ম ধরা পড়ায় জেল-জরিমানা করায় মালিকপক্ষ ধর্মঘট ডেকেছিল। এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখন রাজশাহীতেও একই অবস্থা। আদালত অনিয়ম-দুর্নীতি দেখে জেল-জরিমানা করেছেন, আর এদিকে রোগীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলে মালিকপক্ষ ধর্মঘট ডেকে বসেছে। তার মানে কি এই তারা ইচ্ছেমতো অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাবে, আইন ভঙ্গ করবে; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?

আরেকটি ঘটনা ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায়। সেখানকার পরিবহন-মালিকরা ১২ দফা দাবিতে ধর্মঘট চালাচ্ছিলেন। তার অবসান হয় গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যেসব দাবিতে ধর্মঘট করছিলেন, তার সবগুলোর উপযোগিতা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি না; কিন্তু ধর্মঘটই কি সমাধান? তারা যেসব দাবি তুলেছেন, তার কিছু তো সরাসরি আইনের বিরুদ্ধে যায়। যেমন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের সাইড অ্যাঙ্গেল, বাম্পার ও হুক খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করা। একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান তৈরির সময় এগুলো থাকে না; পরে পরিবহন-মালিকরা নিজেদের সুবিধার স্বার্থে যুক্ত করেন। এসব বিষয় নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সরকারের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। এমনকি সব ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের সাইড অ্যাঙ্গেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল একবার। সেখান থেকে কেন সরে এলেন তারা? কেনই বা নৌপরিবহনমন্ত্রীও সাইড অ্যাঙ্গেলের পক্ষে কথা বললেন? সাইড অ্যাঙ্গেল যদি রাখতেই হয়, তাহলে সরকারি আদেশ জারি করে তা নিয়মসিদ্ধ করা হোক। রাস্তাঘাটে ঝুঁকি বাড়ানোর মতো দাবিতে সরকার কেন নমনীয় হবে, তা বুঝতে আমরা অপারগ।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অবশ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছে, যেগুলো সরকারের উচিত দ্রুত সমাধান করা। উদাহরণস্বরূপ, পথে পথে চাঁদাবাজি। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের চর্চাÑকখনও কমে, কখনও বাড়ে। চাঁদাবাজির প্রভাব শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়ে। কাগজপত্র পরীক্ষার নামে চাঁদাবাজি বন্ধ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান কিংবা সেতুর টোল কমানোর মতো দাবিগুলো যৌক্তিক। কিন্তু এসব দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘটই করতে হবে কেন? নাকি সাইড অ্যাঙ্গেল রাখার দাবিটিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য বাকিগুলো জুড়ে দেওয়া হয়েছে?

পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ শক্তিশালী গোষ্ঠী। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা চাইবো, ধর্মঘটের মতো দুর্ভোগ-সৃষ্টিকারী ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কর্মসূচি তারা যেন না দেন। সরকারের প্রতিও আহ্বান থাকবে, শুরু থেকেই আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া; যাতে ধর্মঘটের মতো কঠিন কর্মসূচিতে কাউকে না যেতে হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০