খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট যতক্ষণে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন প্রত্যাহার করেছে, ততক্ষণে যাত্রীদের ভোগান্তি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকা পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের অভ্যাস হয়ে গেছে মনে হয়। দিন কয়েক আগে হঠাৎ ধর্মঘট ডাকা হয় সিলেট বিভাগে। টিকিট কাটা যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন, তাদের জন্য নির্ধারিত বাস ছেড়ে যাবে না। এরকম অবস্থায় তারা যে কী দুর্ভোগে পড়েন, সেটা কি পরিবহন মালিকরা উপলব্ধি করতে পারেন?
সড়ক দুর্ঘটনায় বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের মামলায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এ রায়ের প্রতিবাদে খুলনা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। এটাকে কি সরাসরি আদালত অবমাননা বলা যাবে না? আদালতে রায় দেওয়া হয় সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। রায় পছন্দ না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরাও উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। তাদের সে সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটা না করে পরিবহন ধর্মঘট ডাকার মাধ্যমে তারা সরাসরি আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলেন। তাহলে কি এভাবে বলা যায়, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা দেশের আইন মানতে রাজি নন? দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার জন্য আমরা এককভাবে চালককে দায়ী করি না। রাস্তাঘাটের অবস্থা, ত্রুটিপূর্ণ নকশা, মানুষের অসচেতনতাসহ অনেক কিছুই এর কারণ। তারপরও মানতে হবে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটে চালকদের বেপরোয়া স্বভাব ও নিয়ম না মানার কারণে। তারেক-মিশুকরা মারা গেছেন চালকের কারণে, আদালতে তা প্রমাণিত। আদালত নির্দিষ্ট অপরাধে সংশ্লিষ্ট চালককে শাস্তি দিয়েছেন, সেখানে কোন কারণে শ্রমিক-মালিকরা এ রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন? স্বজাতিপ্রীতিবোধ কি এতই প্রবল হওয়া উচিত, যা আইনকানুনের চেয়েও বড় হয়ে যায়?
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ধর্মঘটকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, এ ধর্মঘট করে কোনো লাভ হবে না। আমরা তার এ অবস্থানকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি সরকারের উচ্চমহলের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, দেশের মানুষকে জিম্মি করে নেওয়া যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ বা গোষ্ঠীর প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। তবে যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলে জনসাধারণের দুর্ভোগ হবে না, তেমন কর্মসূচি সবাই নিতে পারেন। আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট পালন প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে সরাসরি অবস্থান নেওয়া আদালতকেই মান্য না করা। ধর্মঘটের এ সংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত।