নিজস্ব প্রতিবেদক: মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট শেষে বেড়ে যায় গরু-খাসির মাংসের দাম। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন গরু-খাসির মাংস। বাজারভেদে এ পার্থক্য ২০ থেকে ৫০ টাকা। এ পরিস্থিতিতে ধর্মঘটে শুধু দাম স্থায়ীভাবে বাড়ানোর জন্য লোকদেখানো ছিল বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন সুপারশপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ৪৭০ থেকে শুরু করে ৫৩০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। কিন্তু তা ধর্মঘটের আগে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হতো। মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের পর থেকেই এ বর্ধিত দাম কার্যকর হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
এদিকে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছে, মাংস ব্যবসায়ীদের যেসব দাবি-দাওয়া তা কিছু যৌক্তিক আবার কিছু অযৌক্তিক। তবে এসবই পুরোনো ঘটনা। নতুন করে গরু কিনতে বা আমদানিতে দাম বৃদ্ধির মতো কোনো কারণ ঘটেনি। তাই বাজারে এখন অযৌক্তিতভাবে বেশি দামে মাংস বেশি করা হচ্ছে। তাদের সমস্যা-সমাধানে সরকারের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠকও হয়েছে। তাদের সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা প্রয়োজন।
গতকাল কলাবাগান ও শুক্রাবাদে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। পাশেই আবার গ্রিন রোডের বউবাজারসহ সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজারে দাম ৪৮০ টাকায়। এদিকে কারওয়ান বাজারে এসে আবার সেই মাংসের দাম আগের মতো ৪৫০ টাকায়। একইভাবে বাজারভেদে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।
এদিকে ধানমন্ডির ২৭ নম্বরের মীনা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ টাকায়। স্বপ্নের বিভিন্ন আউটলেটে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। আগোরায় বিক্রি করছে ৪৮৯ থেকে ৫২০ টাকায়।
সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজারে মাংস বিক্রেতা রইস উদ্দিনের কাছে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আন্দোলনের পরে তো কোনো সুবিধা পাইনি। এখন মাংসের দাম বৃদ্ধির ছাড়া কোনো উপায় নেই।
একই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এখনও গরু কিনতে কারও কাছ থেকে ৫০ টাকা আবার কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা খাজনা নেওয়া হচ্ছে। যারা বেশি দামে গরু কিনছেন, লোকসান ঠেকাতে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ধর্মঘট করেও সরকারের কোনো একটা লোক আমাদের সঙ্গে সমাধানের জন্য কথা বললো না। গত বুধবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটা মিটিং হয়েছে। সেখানে খাজনার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। এ পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মাংস বিক্রি বন্ধের সময় কিছুটা চড়া ভাব থাকলেও এখন মুরগির মাংসের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া স্থিতিশীল রয়েছে সবজি ও মাছের দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা, বেগুন ৪০, ফুলকফি ২৫-৩০, কাঁচামরিচ ৪৫-৫৫, দেশি পেঁয়াজ ২৫-৩০, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫, শিম ২৫-৪০ ও টমেটো ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই-কাতল-মৃগেল মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া-সিলভার কার্প-পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৮০, চাষের কৈ-মাগুর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে দেশি টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ কেজিপ্রতি (মাঝারি) ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহের ব্যবধানে মুদি পণ্যের বাজার ঘুরে তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, ভারতীয় মসুর ডাল ১১৫, মুগ ডাল (দেশি) ১২০, ভারতীয় মুগ ডাল ১১০, মাষকলাই ১৩৫ ও ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Add Comment