প্রতিনিধি, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) :‘সাবধান! ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু, পাঁচ টনের অধিক যানবাহন চলাচল করা নিষেধ’Ñএমনই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সাঁটানো রয়েছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের বাদশাগঞ্জ বাজারসংলগ্ন একটি সেতুর প্রবেশ মুখে। সাইনবোর্ডটি নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর আদেশ সংবলিত। তবু তোয়াক্কা করছেন না অনেকে। চরম ঝুঁকি থাকলেও প্রতিনিয়ত সেতু দিয়ে চলছে ভারী যান। রাতে চলে মালবাহী বড় বড় ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যান।
চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজার, গাছতলা বাজার, মধ্যনগর বাজারের একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ট্রাকভর্তি মালামাল বাজারে নিয়ে আসছে। সক্ষমতার চেয়ে তিন-চার গুণেরও বেশি মালামাল নিয়ে যাতায়াতকারী এসব যানের চাপে যেকোনো সময় সেতু ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে যান ও মালামালের ক্ষতিসহ মূল্যবান জীবন বিলীনের পাশাপাশি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করার শঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, ধর্মপাশা-মধ্যনগর বাদশাগঞ্জ বাজারসংলগ্ন সড়ক একটি অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ পাশের নেত্রকোনা জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী এ সড়ক দিয়ে ধর্মপাশা, মধ্যনগর তাহিরপুর, জামলাগঞ্জ ৪টি উপজেলার প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ দৈনন্দিন যাতায়াত করে থাকেন। এ সড়কে কুকড়াপশী, শালমারা ও নিয়ামতপুর-ইচ্ছারচড় অংশের ৩টি বেইলি সেতুসহ দেবে যাওয়া ঢালাইকৃত একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, টিন, রড, সিমেন্ট, গ্যাস সিলিন্ডার, সার, বীজ, ফলমূল, মুদি মালমালসহ সব ধরনের ভারী মালামাল নিয়ে বিশালাকার ট্রাক প্রতিনিয়ত ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের বাদশাগঞ্জ বাজার পাশে সংলগ্ন বেইলি সেতু হয়ে পাশের জেলা মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা বাজারে প্রবেশ করছে। রাত একটু গভীর হলেই মালবাহী ভারী যান বিভিন্ন বাজারের রোড দখল করে বসে। পরে মালামাল নামিয়ে রাতেই ট্রাক নিয়ে সটকে পড়েন চালকরা। এছাড়া মাঝে-মধ্যে মালবাহী ট্রাক ,হ্যান্ড ট্রলি ও মহেন্দ্র গাড়ি ও ভ্যান, দিনে-দুপুরে বাজারে ঢুকে চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষের আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন চরম ঝুঁকি নিয়েই সেতু পার হচ্ছে অধিক ওজনের ভারী মালামাল বহনকারী ট্রাক। এ ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো নজরদারি নেই।
এ ব্যাপারে বাদশাগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, চলাচলের জন্য একটি মাত্র বেইলি সেতু আছে কিন্তু অধিক পণ্যবাহী যান চলাচলের সক্ষমতা রাখে না। তারপরও ট্রাক, হ্যান্ড টলি ও মহেন্দ্র গাড়ি ভর্তি করে দিনে-রাতে যেভাবে মালামাল আসছে, তাতে সেতু ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এসব মালামাল আনেন, তারা ইচ্ছা করলে তা নৌকায় করেও আনতে পারেন। কিন্তু তারা সময় ও খরচ বেশি লাগবে বিধায় ট্রাকেই মালামাল নিয়ে আসেন। এটি আসলে ঠিক নয়। সেতু ভেঙে গেলে সবাইকেই সমস্যায় পড়তে হবে। এ বিষয়টিতে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
মোটরসাইকেল চালক স্বপন আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর যাওয়ার পথে যে স্টিলের সেতু আছে তার একটা ভেঙে গেলেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত যেতে পারবে না। তখন আমাদের রোজগারও কমে যাবে। বেইলি সেতু দিয়ে যাতে বড় কোনো ট্রাক, হ্যান্ড টলি ও মহেন্দ্র গাড়ি না আসতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
সেলবরষ ইউপি চেয়াম্যানদের গোলাম ফরিদ খোকা বলেন, প্রায় প্রতিদিনেই মালামালবোঝাই বড় ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক, হ্যান্ড টলি ও মহেন্দ্র গাড়ি ব্রিজ দিয়ে প্রবেশ করছে। এ ট্রাকগুলো ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের ১টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে বাজারে ঢোকে। তাই যেকোনো সময় সেতু ভেঙে যাত্রীসাধারণকে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হবে। এখন বাধাহীনভাবে বড় বড় ট্রাক যেমন আসা-যাওয়া করছে, তাতে সেতু ভেঙে ভোগান্তি বাড়লে এর দায় কে নেবে?
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, কেউ নির্দেশনা মানে না। আমাদের পক্ষেও ২৪ ঘণ্টা দেখভাল করা সম্ভব নয়। যখন সেতু ভাঙবে, তখন সবাই বিপদে পড়বে। ওই বেইলি সেতুর নকশা তৈরি করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশা তৈরি হলে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে। এরপর প্রকল্প অনুমোদন হলে সেতুর কাজের দরপত্র হবে।