নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের বিচার এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে হিন্দুদের কয়েকটি সংগঠন। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ সেখানে অবস্থান নেয়। পরে জাগো হিন্দু পরিষদ, আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ ও ইসকন সংহতি জানিয়ে তাতে অংশ নেয়।
এর আগে সকালে একই দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন করার বিষয়ে সরকারের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানান হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্রু।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আমাদের দাবির বিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। তাই আমরা শাহবাগ অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলবে।’
অবরোধ কর্মসূচি থেকে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শিগগির সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ।
বিক্ষোভকারীরা ‘জাগো রে জাগো, হিন্দু জাগো’, ‘মৌলবাদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জিহাদিদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘মন্দিরে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রংপুরে আগুন কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দেন।
সেখানে বাংলাদেশ হিন্দু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর কী নারকীয় হামলা হয়েছে! প্রশাসন সেখানে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। এর আগেও সাম্প্রদায়িক হামলায় সংখ্যালঘুরা বিচার পায়নি। হামলার কুশীলবরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আমরা চাই, হামলার নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদেরও যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।’
দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পণ সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে। তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন পাঁচজন।
এর পরের কয়েক দিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। তাতে নোয়াখালীতে নিহত হন দুজন।