ইসলামের ইতিহাসের অনুসন্ধানী পাঠকমাত্রই জানেন, এ ধর্মে অনেক সম্প্রদায় রয়েছে। যেমনÑসুন্নি, খারিজি ও শিয়া। সুন্নিরা হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি ও হাম্বলি উপশাখায় বিভক্ত। এর বাইরে রয়েছে ওহাবি বা সালাফি, আহলে হাদিস ও জাহিরি উপশাখা।
শিয়া সম্প্রদায়ের জাফরিয়া (বারো ইমামে বিশ্বাসী), জাইদিয়া (সাত ইমামে বিশ্বাসী), ইসমাঈলিয়া, আলাভি বা নুসাইরি বা আনসারি প্রভৃতি উপশাখা রয়েছে। এর বাইরে আছে আহমদিয়া সম্প্রদায়। এর উপশাখা হলো জামাতে আহমদিয়া ও ইবাদি। এ শাখা-প্রশাখায় যতটুকু মিল থাকে, অমিল থাকে তার চেয়ে বেশি। প্রতিটি প্রশাখা নিজেদের সহিহ (বিশুদ্ধ) মনে করে, অন্যদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে।
আমাদের দেশে প্রসিদ্ধ চার ইমামের একজন ইমাম আবু হানিফার অনুসারী হানাফি উপশাখার লোকজনই বেশি। তাদের ধর্ম পালনের রীতি-নীতি সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশি ধারণা রয়েছে। এর অনেকটা উদার। উপমহাদেশে এ সম্প্রদায় বেরেলভি, দেওবন্দি, ইলিয়াসি জামাত, মওদুদি জামাত প্রভৃতি আকিদায় বিভক্ত হয়ে গেছে। এ বিভক্তি এত প্রকট যে এটি দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। ফলে অতীতে প্রত্যেকের জন্য একই স্থানে আলাদা আলাদা মসজিদ নির্মাণ করতে হয়েছিল। এমনকি এক মাজহাব অন্য মাজহাবে বিয়ে করা হারাম বলে ফতোয়া জারি করেছিল। এখন প্রত্যেককে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দ্বন্দ্ব কিছুটা কমে গেছে। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা সুফিজম। কিন্তু একেক এলাকায় একেকজন সুফি আসন গেড়ে বসেছেন। মানুষজনকে মুরিদ (অনুসারী) বানিয়েছেন।
মুরিদদের ধর্মকর্মের সবকিছু তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি মুরিদকে যে পদ্ধতিতে নামাজ-রোজা পালন করতে বলেন, মুরিদরা সেটিই করেন। এক্ষেত্রে অনেক সুফি নিজস্ব স্বতন্ত্র নিয়মকানুন অনুসরণ করেন। আমাদের দেশের শাহজালাল, চরমোনাই, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী প্রমুখ হচ্ছেন সুফিবাদের উদাহরণ। তাদের সংখ্যা অসংখ্য। উল্লেখযোগ্য হলো আলেভি, বেকতাশি, বোরহানিয়া, মেভলেভি, বা’লাভিয়া, চিশতিয়া, রিফাঈ, খালবাতি, নকশাবন্দি, নি’মাতুল্লাহি, কাদেরিয়া, বোস্তামিয়া, সাধিলিল্লা, মাইজভাণ্ডারি, মোজাদ্দেদিয়া, কালান্ধারিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া প্রভৃতি।
এগুলো অসংখ্য শাখা-উপশাখা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিংবা নতুন কোনো শাখায় পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে খারেজি, মুরজিয়া, মুতাজিলা, মুশাব্বিয়া, জাহমিয়া, জারারিয়াহ, নাজ্জারিয়া, কালবিয়াহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এত সম্প্রদায়ের কথা ধর্মীয় পণ্ডিতরাই জানেন। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো শান্তির ধর্ম ইসলামে বিভক্তি এত তিক্ত হয়েছে যে এটি সাধারণ মানুষও জানছে। শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পুরোনো ও নতুন খতিবের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। জুমার নামাজ শুরুর আগে খতিব জটিলতায় থমথমে হয়ে ওঠে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পরিবেশ।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে থাকা বায়তুল মোকাররমের খতিব রুহুল আমিন ফিরে আসার ঘটনায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের কাজ করতে হয়। আমাদের নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ রহমতবিশেষ। কিন্তু মুসলিমরা সে শিক্ষা থেকে সরে এসেছে। ধর্ম পালনে সহনশীল হলে বিরোধ এড়ানো সম্ভব।