নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদকে ছয় দিন ও তার সহযোগী সাদমান সাকিফকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম শুক্রবার এই আদেশ দেন।
এ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত ও পিকাসো রেস্তোরাঁর মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমানকে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় আনা হয় তাদের। পরে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকালে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার এর বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে সাফাতকে ছয় দিন ও সাদমানকে পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের এ মামলায় সাফাতের আরেক বন্ধু নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী এবং গাড়িচালকও আসামি।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জš§দিনের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। সাদমানসহ অন্য তিনজন ছিলেন সহযোগী। ওই দুই তরুণী বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের মধ্যে একজন এর আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সাদমান তাদের বন্ধু; তাদের দুই বান্ধবীকে সে পীড়াপীড়ি করে সাফাতের জš§দিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে নিয়েছিল।
ঘটনার মাসখানেক পর গত ৬ মে এক তরুণী বনানী থানায় মামলা করার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সাফাত গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের সমালোচনাও ওঠে। পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় এক প্রবাসীর বাসা থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার জানান, ‘কথিত এ ঘটনা ঘটেছে বহুদিন আগে। যদি ঘটনা ঘটেও থাকে, তাহলে ধর্ষণের চিহ্ন-আলামত কীভাবে পুলিশ ও চিকিৎসকরা শনাক্ত করবে? এটা ধর্ষণ মামলা হিসেবে টিকবেই না, এ মামলা বিচারের জন্য আমলেই আসবে না। এ মামলা উদ্দেশ্যমূলক। প্রভাবশালী আসামিদের হেনস্তা করতে সুবিধা না পেয়ে এ মামলা করা হয়েছে।’
অন্যদিকে আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘এতদিন তারা (ভিকটিম) প্রভাবশালী আসামিপক্ষের হুমকিতে কথা বলেনি, এখন অনকূল পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছে, সত্য উšে§াচন করেছে।’
এদিকে দুই আসামিকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিনও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কৃষ্ণপদ রায় বলেন, দুই আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ধর্ষণের মামলাটির তদন্তে সহায়তা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়ের নেতৃত্বে এ কমিটিতে আছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মুশতাক আহমেদ এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন। এছাড়া ধর্ষণের মামলা গ্রহণ করতে বনানী থানায় কোনো গাফিলতি হয়েছে কি না, সেটি তদন্ত করার জন্য অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা হলেনÑমহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, কৃষ্ণপদ রায় এবং মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, মামলার বাকি আসামিরা এখনও পলাতক। এখনও অভিযান চলমান আছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের তদন্ত কার্যক্রম গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, তদন্তের পারিপার্শ্বিক যে তথ্যগুলো আছে, যেসব ফিজিক্যাল এভিডেন্স আছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে যে এভিডেন্সগুলোর ফরেনসিক ও ডিজিটাল ফরেনসিক এবং মেডিক্যাল ফরেনসিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে, সে তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করছি।