শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বকে চমকে দিয়ে গতকাল ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর ইউক্রেনের অনেক অবকাঠামো ও সীমান্তরক্ষীদের ওপর মিসাইল হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। তবে আপাতত ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। পুরো ইউক্রেন দখলের ইচ্ছা নেই তার। আর এ হামলার ঘোষণায় এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারসহ বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব পুঁজিবাজার। বেড়েছে তেলের দাম। খবর: সিএনএন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর ইউক্রেনে পূর্ণ শক্তিতে হামলা চালায় রাশিয়ার সেনারা। দনবাস ছাড়াও কিয়েভে কয়েক দিক থেকে হামলা চালানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করছে আর্থিক বাজারে। যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমেছে সূচক।
গতকাল মস্কো এক্সচেঞ্জ বাজারে লেনদেন স্থগিত করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে বলেও জানা গেছে।
জাপানের নিক্কেই ২২৫-এর সূচক কমেছে দুই দশমিক চার শতাংশ। চীনের সাংহাই কম্পোজিটের কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে তিন দশমিক দুই শতাংশ। কোরিয়ান কোম্পিংয়ের কমেছে দুই দশমিক সাত শতাংশ।
যুদ্ধ শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে ভারতে সকাল ৯টা ১৯ মিনিটে বিএসই সেনসেক্সের দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ পতন হয়। এক হাজার ৪৫৮ পয়েন্ট কমে তা এসে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৭৭৪-এ। দেশটির এনএসই নিফটি ৪১৬ পয়েন্ট পতন হয়ে তা নামে ১৬ হাজার ৬৪৬-এ। অর্থাৎ দুই দশমিক ৪৩ শতাংশ পতন হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগেও দেশটির বাজারে এর প্রভাব পড়ে। গত সোমবার থেকে পতনের ধারা দেখা গেছে। সেদিন এক ধাক্কায় এক হাজার পয়েন্ট পড়ে পুঁজিবাজার। বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ধস নামতে শুরু করে। নিফটিতেও রাশিয়া-ইউক্রেনের মাঝে উত্তেজনার প্রভাব পড়ে। সপ্তাহের প্রথম দিন এক ধাক্কায় ১৭ হাজার পয়েন্ট পড়ে নিফটির।
যুক্তরাষ্ট্রের ডাও ফিউচারের সূচক কমেছে দুই দশমিক চার শতাংশ। এসঅ্যান্ডপি৫০০-এর সূচক কমেছে দুই দশমিক তিন শতাংশ। আর নাসডাক ফিউচারের সূচক কমেছে দুই দশমিক আট শতাংশ।
এদিকে ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক অভিযান ঘোষণার পর তেলের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সামরিক অভিযানের ঘোষণার পর এক লাফে তেলের দাম পাঁচ শতাংশ বেড়ে গেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারলপ্রতি বেড়ে ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। গত সাত বছরের মধ্যে এই প্রথম তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়াল। এ হিসাবে ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ হলো তেলের দাম। এর আগে গত মঙ্গলবার তেলের দাম গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। সেদিন তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ৯৮ মার্কিন ডলার হয়।
পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পাঁচ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। সাধারণত নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে ধরা হয়। স্বর্ণের দামও এক দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে সৌদি আরবের পরে রাশিয়া দ্বিতীয় অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। আর প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বিশ্বে অপরিশোধিত তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনে জাহাজ ও অন্যান্য যানবাহনে পরিবহন খরচ বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা আরও বাড়বে। তাই তড়িঘড়ি করে ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি নতুনভাবে শুরুর পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। কেননা রাশিয়া থেকে তেল সরবরাহে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।