Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:47 pm

ধানের উৎপাদনশীলতা: দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

 

নাজমুল হুসাইন: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মেছাঘোনা গ্রামের কার্তিকডাঙ্গা বিলে বোরো চাষ ভালো হয় না। তবে গত বোরো মৌসুমে সেখানে প্রথম ব্রি-৬৩ এবং ব্রি-৫৮ দুটি জাতের ধান চাষ করেন ইউনুছ আলী। ওই বিলে হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৬ টন ধান উৎপাদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।

এ বছরে কার্তিকডাঙ্গা বিলে বোরো আবাদ করছে অনেকেই। কেউ আগের জাতগুলো চাষে আগ্রহী। আবার অনেকে আরো উন্নত জাতের খোঁজে ডুমুরিয়া উপজেলায় কৃষি কর্মমর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অর্থাৎ ওই এলাকার সব চাষিই এ বছর নতুন উদ্ভাবিত জাতের সুবিধা নিয়ে বেশি ফলন ঘরে তুলতে চান।

দেশে প্রতি বছর আবাদি জমি কমলেও ধান উৎপাদনে বেড়েছে উন্নত জাত ও নানা প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণের বেশি। এ অবস্থায় ধান বাংলাদেশকে বিশ্বে চতুর্থ উৎপাদনকারী অবস্থানে এনেছে। তবে উৎপাদন বাড়লেও আগে দেশের উৎপাদনশীলতায় অগ্রগতি কম ছিল। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি বাণিজ্য সম্পর্কিত পরিসংখ্যান বলছে, উৎপাদনশীলতার দিক থেকে এ অঞ্চলে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

গত অক্টোবরে প্রকাশিত হয় ‘এগ্রোবিজনেস ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদন। সেখানে বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন ৪ দশমিক ৩৯ টন, যা অন্য সব দেশের থেকে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় অবস্থানে শ্রীলঙ্কায় হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন ৩ দশমিক ৮৯ টন। এছাড়া ভারতের উৎপাদন ৩ দশমিক ৬৪ টন, পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৬৪, নেপালে ৩ দশমিক ১৭ ও আফগানিস্তানে ২ দশমিক ৪৯ টন।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকারের খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির দৃঢ় মনোভাবে নীতিগত সহায়তা আগের তুলনায় প্রচুর বেড়েছে। চাষযোগ্য জমি কমলেও সহজলভ্য হয়েছে কৃষকদের কৃষি উপকরণ, শস্যের নতুন জাত, প্রযুক্তি। সব মিলে ধানের উৎপাদন প্রতি বছরই বাড়ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অবস্থান থেকে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে এগিয়ে যাবে।’

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে কৃষিজমি কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এরপরও দেশে কমেনি ধানের উৎপাদন। উল্টো তিনগুণ বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, স্বাধীনতার সময় ১৯৭০-৭১ সালে ধানের উৎপাদন ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন, যা এখন সাড়ে তিন কোটি টন ছেড়েছে। প্রতি বছর ক্রমেই বাড়ছে ধানের উৎপাদন। গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ উৎপাদন ৩২২ দশমিক ৫৭ লাখ টন ছিল, যা গত বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে ৩৫০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধান উৎপাদনে সফলতায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট’ (বিআরআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে হাইব্রিডসহ মোট ৮২টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে দেশের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে বিআরআরআই উদ্ভাবিত এসব উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ হয়। এতে গড় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছে।

বিআরআরআইয়ের তথ্যমতে, তাদের উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত বর্তমানে দেশের বোরো ধানের (শীতকালীন ধান) ৮২ শতাংশ, আউশের (গ্রীষ্মকালীন) ৩৬ শতাংশ এবং প্রতিস্থাপিত আমনের (বর্ষাকালীন ধান) ৪৭ শতাংশ এলাকা চাষ হয়। বর্তমানে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ ব্রির বিভিন্ন জাত থেকে আসে। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ এবং ব্রি ধান-২৯ সবেচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে। এসব ধান হেক্টরপ্রতি প্রায় ৫ থেকে ৬ টন ফলন দেয়। দেশে বিআর-২৮ জাতের ধান ২০ শতাংশ জমিতে ও বিআর-২৯ ধানের আবাদ হচ্ছে ১৪ শতাংশ জমিতে। অন্যদিকে বিআর-১১ ধানের আবাদ হচ্ছে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ জমিতে। এছাড়া ৩ শতাংশ জমিতে আবাদ হচ্ছে বিআর-২৫ ধানের। অন্যদিকে কয়েক বছর আগে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশকে চতুর্থ অবস্থান ঘোষণাকারী একটি প্রতিবেদন ‘দ্য কান্ট্রিজ’-এর তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় বাংলাদেশের ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন। সে সময় ১৪ কোটি ৩০ লাখ টন ধান উৎপাদন করে বিশ্বে প্রথম ধান উৎপাদনকারী দেশ হলো চীন। ৯ কোটি ৪০ লাখ টন ধান উৎপাদন করে দ্বিতীয় ভারত। বাংলাদেশের চেয়ে ৩১ লাখ টন বেশি ধান উৎপাদন করে দ্বিতীয় ধান উৎপাদনকারী দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া।