নিজস্ব প্রতিবেদক: ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের ধান-চালের অবৈধ মজুতের তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
চালের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গতকাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল সভায় মন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তবে তারা নাম প্রকাশ করেননি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি ফুড) তার জেলায় কারা ধান-চালের ব্যবসা করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এর মধ্যে কারা অবৈধভাবে ধান-চালের মজুত করছেন, তা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকে (আরসি ফুড) জানাতে হবে। কেউ মজুত না করলে সেটাও জানাতে হবে যে, তার জেলায় কেউ খাদ্য মজুত করছে না। সেই মজুতদারদের তালিকা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে কোনো জায়গায় মজুত করছে না বলে প্রতিবেদন দেয়ার পর, সেখানে মজুত পাওয়া গেলে, সেই কর্মকর্তাকে ধরা হবে।’
সভায় খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মিলাররা। চিকন চালের দাম করপোরেট ব্যবসায়ী ও অটোরাইস মিলাররা নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল মালিক ও আড়তদাররা চাল মজুত করে মৌসুমের শেষ সময়ে দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়ে। গত বছর অভিযানের মাধ্যমে এমন অনেক মজুতের চাল বের করা হয়েছে।’
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বাজারে চালের অভাব নেই। মিলমালিকরা চাল ধীরে ধীরে ছাড়ছে বলে দাম বাড়ছে। এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। না হয় সামনে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
কেন্দ্রীয় বাজার মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কেন্দ্রীয় তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওএমএস উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। ঠিকভাবে মনিটরিং করতে হবে বিতরণ।’
শুল্ক কমিয়ে চিকন চাল আমদানির প্রস্তুতি নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘এবার ২৫ শতাংশের কম শুল্কে চাল আমদানি করতে হবে। অনুমতিটা আগেই নিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে যেতে হবে চাল আমদানিতে।’
মিলমালিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘চাল আমদানিতে বাধ্য করবেন না। চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করুন। আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্যের মতো।’
কেউ অনিয়ম করে বিপদে পড়লে এর দায়-দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয় নেব না। বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে হবে বলেও সভায় মন্ত্রী জানান বলে উল্লেখ করেন খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে চালের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা ভার্চুয়ালি হয়।
সভায় খাদ্য অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ চালকল মালিক, চাল আমদানিকারক, চাল ব্যবসায়ীরা যুক্ত ছিলেন।