শেখ আবু তালেব: প্রচলিত ও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে সুদ ও মুনাফা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে (কভিড-১৯) গ্রাহকদের কাছ থেকে সেই সুদ বা মুনাফা আদায় দুই মাসের সুদ আয় স্থগিত ছিল। এতে লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। সেই সুদ ও মুনাফা আদায়ে নীতিমালা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিগগিরই তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।
সূত্রেমতে, গত এপ্রিল ও মে মাসের ব্যাংকগুলো সুদ ও মুনাফার হিসাবটি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিটি ব্যাংকের আয় ঋণাত্মক হয়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করতে নীতিমালা দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় একসঙ্গে আয় খাতে নিতে পারবে, কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে একসঙ্গে আদায় করতে পারবে না। ধাপে ধাপে আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার দুই হাজার কোটি টাকাও বণ্টনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে ওই নীতিমালায়। নীতিমালার চূড়ান্ত করে আগামী সপ্তাহেই তা সার্কুলার আকারে জারি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদ ব্লকড করতে বলেছিল। এ কারণে আমরা ঋণের কোনো সুদই আয় খাতে নিতে পারছি না। কিন্তু আমানতকারীদের মুনাফা পরিশোধ করতে হচ্ছে। পরিশোধ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও নানা ইউটিলিটি বিল। এতে প্রতিটি ব্যাংকই লোকসান গুনছে। এ লোকসান আমরা কীভাবে সমন্বয় করব তার কোনো দিকনির্দেশনা এখনও পায়নি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে গত মার্চ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি মাধ্যম ছিল আমদানি-রপ্তানির বিপরীতে কমিশন আয়। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমদানি রপ্তানিও স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কমিশন আয়ও শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। একমাত্র আয় ছিল সুদ আয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমাতে গত এপ্রিল ও মে মাসের ব্যাংকঋণের সুদহার গ্রাহকের ওপর আরোপ না করে তা আলাদা হিসেবে সংরক্ষণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল পুনরায় নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না।
যেহেতু ব্যাংকের আয়ের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, সঙ্গত কারণেই ব্যাংকগুলো গত দুই মাসে বড় ধরনের লোকসান গুনছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও অনুধাবন করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা অপেক্ষায় ছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসে কি না।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদহারের ওপর দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এখন আমরা ব্যাংকগুলোর লোকসান সমন্বয় করার নীতিমালা দেব।
জানা গেছে, নীতিমালা তিন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রথমত, ব্যাংকগুলোর এপ্রিল-মে মাসের সুদ ও মুনাফা আলাদা হিসেবে রাখা সুদ আয় একসঙ্গে আয় খাতে নিতে পারবে। কিন্তু সেই আয় বাস্তবে নিতে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একবারে আদায় করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, দুই মাসের সুদ আয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে আদায় করার জন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। এতে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। এ জন্য এক বছর সময় পেতে পারেন ব্যবসায়ীরা। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। ওই প্রণোদনা ব্যাংকগুলোর মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। সবমিলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলমান পরিস্থিতিতে সহনীয় একটি নীতিমালা জারি করবে।
উল্লেখ্য, এপ্রিল ও মে মাসের সুদ হিসেবে ব্যাংকিং খাতের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত হয়েছে।