ধামইরহাটের জগদ্দল পদ্ম মহাবিহার

মো. কামরুল হাসান চৌধুরী:  নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নে রয়েছে জগদ্দল বিহার। অনেক গবেষণার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৯৬ সালে খননকাজ শুরু করে। বেরিয়ে আসে নানা ধরনের মূর্তিসহ মূল্যবান সরঞ্জাম। আর এ জগদ্দল মহাবিহারকে প্রাচীন বাংলার রাজধানী রামাবতীনগর মনে করছেন গবেষকরা।

দ্বাদশ শতকের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত ‘রামচরিতম’ গ্রন্থে উল্লিখিত রামাবতীনগরের ধারণাটি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে এসেছে জগদ্দল বিহারে। তবে প্রায় চার বছর ধরে খননকাজ চলে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে খনন চালায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জগদ্দল বিহারের উৎখনন বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর আন্তরিক। দ্রুতই এর খনন ও সংস্কার শুরু হবে।

১৯৯৬ সালে খনন শুরুর পর মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও শুরু হয় খননকাজ। সর্বশেষ তৃতীয় পর্যায়ে খনন চালানো হয় ২০১৩ সালে। চলে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। ওই সময় প্রতœতাত্ত্বিক খনন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বুদ্ধমূর্তিসহ একের পর এক প্রাচীন নিদর্শন। সে সঙ্গে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বৌদ্ধবিহারগুলোর মধ্যে এ বিহারের ছাদের মিল পাওয়া গেছে। তৃতীয় পর্যায়ের উৎখননে দায়িত্বপ্রাপ্ত

পাহাড়পুর প্রতœতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের কর্মকর্তা মাহাবুুব আলম জানান, এখানেই রয়েছে পাল সম্রাট রামপালের সেই রামাবতীনগর।

২০১৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে জগদ্দল বিহারের পশ্চিম বাহুর একটি ভিক্ষু কক্ষে খনন করতে গিয়ে একটি কুলাঙ্গির মধ্যে পাওয়া যায় ১৪টি ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি। বিহারের মেঝে থেকে বিভিন্ন স্তরে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিল। জগদ্দলের পুবে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎনগর নামে বিশাল জনপদ ছিল। এখানে কর্মরত প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের কর্মকর্তারা বিহারটির আকৃতি দেখে লোটাস বৌদ্ধবিহার বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টোডিয়ান সাদেকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদ্দল মহাবিহারের নাম রয়েছে। এবার খননে পাওয়া গেছে বিহারের ভগ্নাংশ। নির্দিষ্ট দূরত্বে পিলারের সারি পাওয়া গেছে। সে সঙ্গে পাওয়া গেছে বিভিন্ন আকারের অনেক আয়রন নেইল (তারকাটা)। বিহারের উত্তর বাহু খননে বেরিয়েছে পোড়া মাটির টেরাকোটা, যা বিহারের দেয়ালে সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে। এ পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে ৩৩টি ভিক্ষু কক্ষ। সব কক্ষে বুদ্ধমূর্তি রাখার জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল। বিহারের পূর্বমুখে রয়েছে প্রধান প্রবেশদ্বার। প্রথমে পাওয়া যায় পাকা চত্বর। এরপর আট মিটার দৈর্ঘ্যরে বাহুসহ মূল বিহারে প্রবেশের অনুমতি দ্বার। পরে রয়েছে হলঘর। এ হলঘরে চারটি গ্রানাইট পাথরের পিলার উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে কোনো বৌদ্ধবিহারে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন গ্রানাইট পাথরের পিলার দেখা যায়নি।

জগদ্দল পদ্ম মহাবিহারে ছাদের পতিত ভগ্নাংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর পুরুত্ব প্রায় ৬০ সেমি। এতে করে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ছাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া গেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, জগদ্দলে উৎখনন অনুসন্ধানে যেসব তথ্য ও নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাতে রামাবতীনগরের ধারণা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিহারটির পূর্ণাঙ্গ খনন, সংস্কার ও আরও গবেষণা প্রয়োজন।

জগদ্দল নামে আরও কয়েকটি স্থানের নাম পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ খনন ও অনুসন্ধান চালানো হলে সে বিতর্কের অবসান ঘটবে। ধামইরহাট পৌরসভার মেয়র রেজোয়ান হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, বিহারের পাশে একটি জাতীয় উদ্যান আছে। সেখানে একটি জাদুঘর নির্মাণ করে এ বিহার থেকে উদ্ধার করা মূর্তি ও অন্য মূল্যবান সরঞ্জাম সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

 

নওগাঁ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০