ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদহার

রোহান রাজিব: ব্যাংকঋণের সুদহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত মে মাসে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে। একই মাসে আমানতের গড় সুদহার হয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। আমানত ও ঋণের এই গড় সুদহার গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাস এপ্রিলে যা ৭ দশমিক ২৯ এবং ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ব্যাংকাররা জানান, দেশের মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর আমানতেরও সুদহার বাড়াতে হচ্ছে। আমাতদের সুদহার বাড়ার ফলে ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। তাই ব্যাংকের গড় সুদহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এছাড়া নতুন পদ্ধতির সুদহার ব্যবস্থার কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাইয়ে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর পরের মাস আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে আমানত ও ঋণের গড় সুদহার। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে কমতে কমতে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশে নামে ঋণের গড় সুদহার। আমানত নামে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে।

২০২২ সালে আমানত ও ঋণের গড় সুদহার আরও নিচে নামতে থাকে। ওই বছরের ডিসেম্বরে আমানতে সর্বোচ্চ গড় সুদহার উঠে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। বছরের বাকি মাসগুলোয় ৪ দশমিক শূন্য ১ থেকে ৪ দশমিক ১০ শতাংশের মধ্যে ছিল সুদহার। আর ঋণের গড় সুদহার ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ২২ শতাংশ ওঠে। বছরের বাকি মাসগুলোয় ৪ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশের মধ্যে ওঠে সুদহার।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানত ও ঋণের গড় সুদহারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। জানুয়ারিতে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। একই মাসে আমানতের গড় সুদহার হয়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ছিল। মার্চে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৩১ এবং আমানতে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াতে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মে মাসে ব্যাংকের আমানত ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষে ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৩ লাখ ৪৯৯ কোটি টাকায়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলো আমানত বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের ফলে সুদহার কিছুটা বৃদ্ধি পাবে জেনেই আগে থেকে ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ানো শুরু করে। আর সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের জন্য বাড়তি সুদ অফার করে চলছে। ফলে আমানতের গড় সুদহার বেড়েছে।

ডলার সংকটের কারণে গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে। এতে কিছু ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি টাকার সংকট রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে ঋণ চাহিদা বেড়েছে। ঋণের চাহিদা বাড়ার কারণে গড় সুদহার বেড়েছিল।

১ জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ উপায়ে প্রতি মাসেই সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক কোনো সুদ আরোপ করার পর ছয় মাসের মধ্যে গ্রাহকের জন্য তা পরিবর্তন করতে পারবে না। গ্রাহককে অবহিত করে প্রতি ৬ মাস পর তা পরিবর্তন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেন্স রেট নির্ণয় করবে, যা ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল নামে অভিহিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ প্রতিমাসের প্রথম কর্মদিবসে রেট প্রকাশ করবে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ তিন শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করবে। কৃষিঋণে স্মার্টের সঙ্গে যোগ করা যাবে দুই শতাংশ। সিএমএসএমই এবং ভোক্তা ঋণের আওতায় ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ির ঋণে বছরে একবার অতিরিক্ত এক শতাংশ সুপারভিশন চার্জ নেয়া যাবে।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লে ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়বে। এখন যেহেতু মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাই ব্যাংককে সুদহার বাড়াতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে তা তুলে দেয়া হয়। তুলে দেয়ার পরদিন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ১ জুলাই থেকে স্মার্ট সুদহার চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০