Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 2:32 am

ধৈর্যের সীমা ছাড়ালে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে তুলতে এক সপ্তাহ পর কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, তারা অরাজকতা করতেই থাকবেন, আর আমরা দৃশ্য দেখতে থাকব। মোটেই না, আমাদেরও ধৈর্যের সীমা রয়েছে। সেটা অতিক্রম করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট দেশব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকের একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদ্জ্জুামান মিয়া বলেন, পুলিশ আইন প্রয়োগে কঠোর হবে। তবে ব্যবহারে নমনীয় থাকবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আমাদের ট্রাফিক আইনটি মানার জন্য বাধ্য করতে হয় এখানে। আইন তো হয় মানার জন্য, বাধ্য করার জন্য নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে অন্যদিকে নেওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন হাজার হাজার আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো হয়েছে। একটাও স্কুলের ছাত্র নয়, সব প্রাপ্তবয়ষ্ক। পাশাপাশি নানা গুজব ছড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, পাকিস্তানে কী ঘটেছে, সেটা এনে এখানে দেখানো হচ্ছে। দিল্লিতে কী ঘটেছে, আমাদের ২০১৩-১৪ সালের ছবি দৃশ্য দেখাচ্ছে। আর নেতাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কমেন্টস পোস্ট করছে। এগুলো বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। আমরা বলব, তারা এগুলো পরিহার না করলে ব্যবস্থা নেব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচারের নজির হিসেবে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের ভিডিও তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু তিনি (অভিনেত্রী) নন। আমাদের দায়িত্বশীল নেতা (আমীর খসরু), আমরা তাকে ভালো নেতা বলেই জানতাম। তিনি কুমিল্লা থেকে আহ্বান করলেন তারা ঢাকায় এসে যেন আক্রমণ করে। শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের দাবি অপূর্ণ নেই। ৯টি দাবির দুটি দাবি, যেমন আইনের কথা বলেছে সেটার সময় লাগবে, আগামীকাল সেটা কেবিনেটে উঠছে। আন্ডারপাসও প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে, সেটারও কাজ শুরু হবে। কাজেই এখন আর কিছু নেই। তাই আপনাদের মাধ্যমে বলব, তারা যেন রাস্তা থেকে ফিরে যায়।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য থেকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় লক্ষ্য করে হামলা হয়েছিল বলেই প্রতিরোধ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগের দিন জিগাতলায় সংঘর্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে গোলাগুলি করতে করতে আসবেন, তাদেরকে কি বল প্রয়োগ করবে না? চুমু খাবে?
এক গুজব থেকে শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে তাদের ওপর হামলা হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। গতকাল সকালে শেখ কামালের জন্মদিনে বনানীর কবরস্থানে তার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া ওবায়দুল কাদেরের কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নামলে তাদের ওপর বল প্রয়োগ করা হবে কি না? উত্তরে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনো প্রকার বল প্রয়োগে যায়নি।
অশুভ শক্তি ছাত্রদের আন্দোলনে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল, আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের দাবি।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তো চলছেই, এই আগস্ট মাসেও আমরা ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি, গন্ধ পাচ্ছি বাতাসে, অশুভ শক্তির আষ্ফালনের গন্ধ পাচ্ছি। কাদের বলেন, আজকে ছাত্রছাত্রীদের অরাজনৈতিক নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন কারা নোংরা রাজনীতির দিকে ?নিয়ে যেতে চায়, সেটা গত তিনদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। গতকাল তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে, কারা? বিএনপি এবং তাদের উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির দোসররা কীভাবে এ নিরীহ কোমলমতি আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এই আন্দোলনকে নোংরা রাজনীতির খেলায় পরিণত করার জন্য তাদের যে তৎপরতা, এটা দেশবাসী লক্ষ করেছে।
এ সময় ইন্টারনেটে আসা বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কথিত ফোনালাপের কথা তুলে ধরেন কাদের। বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুমিল্লা থেকে ঢাকায় লোক পাঠানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেছে। এ আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীদের সামনে-পেছনে বয়স্ক বয়স্ক অনেকে, যাদের বয়স ৩৫ ও ৪০ বছর, তারা স্কুল-কলেজের ড্রেস বানিয়ে নেমেছিল। গুজব ছড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে মেয়েদের নাকি আটকে রেখেছে, সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা আওয়ামী লীগ অফিসে সারাদিন ছিলেন, কোথায় আটকেছিল কে? অনেক ঘটনাই ফাঁস হয়ে যাবে, সবার ছবি আছে। সবার কার্যক্রম আমরা নীরবে লক্ষ করেছি। অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান কাদের।