Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:43 pm

ধোঁয়াহীন তামাক নিয়ন্ত্রণে কর বৃদ্ধি ও বাজার নজরদারির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য নাম-ঠিকানাবিহীন তামাক কারখানার কর ফাঁকি বন্ধ করার জন্য বাজার নজরদারি করতেও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গতকাল বিকালে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ধোঁয়াহীন তামাক নিয়ন্ত্রণ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে তারা এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ও টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) সম্মিলিতভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। মিটিং সফটওয়ার জুমের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, হংকং, ফিলিপাইন, কেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন নীতিনির্ধারক, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, তামাক নিয়ন্ত্রণ অ্যাডভোকেট ও উন্নয়ন কর্মীরা এ ওয়েবিনারে অংশ নেন।

ওয়েবিনারে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের ডেপুটি ডিরেক্টর (তামাক নিয়ন্ত্রণ) আশিষ কুমার পাণ্ডে ভারতে ধোঁয়াহীন তামাক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ভারতের ২৮টি রাজ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সব জায়গায় ধোঁয়াহীন তামাকের ব্যবহার চলছেই। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ধোঁয়াহীন তামাক পরিস্থিতির নিয়ে আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে তামাকহীন বিশ্ব গড়ার যে স্বপ্ন দেখি সেটা অধরাই থেকে যাবে। এজন্য প্রথমে আমাদের আঞ্চলিকভাবে তামাকমুক্ত হওয়ার প্রতি নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশে ধোঁয়াহীন তামাক পণ্যের উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ে তামাকবিরোধী নারী জোটের (তাবিনাজ) আহ্বায়ক ফরিদা আকতার বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করে, যাদের অধিকাংশই নারী। তাদের মাধ্যমে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তামাক চাষ করতে গিয়ে নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। ফলে নারী ও শিশুসহ ধোঁয়াহীন তামাকপণ্য থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে এ খাতে যথাযথভাবে নজরদারি করতে হবে। একইসঙ্গে কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

ওয়েবিনারে নেপাল, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের চিত্র তুলে ধরেন দ্য ইউনিয়ন এশিয়া প্যাসিফিকের ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর তারা সিং বাম। তিনি বলেন, ধূমপানের পাশাপাশি এসব দেশে ধোঁয়াহীন তামাকেরও ব্যাপকহারে ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দেশে তামাক করও একেবারে সীমিত। প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় দুই লাখ ২৫ হাজার ৭০০ জন, নেপালে ৬৫ হাজার ৬৫১ জন এবং মিয়ানমারে ২৭ হাজার ১৩৭ জন তামাকজনিত রোগে মারা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার পরও সরকারের সদিচ্ছা ও জবাবদিহির অভাবেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে এ করোনাদুর্যোগে তামাকজনিত রোগের মৃত্যু ঠেকাতে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে।

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি’র আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, ভারতের পরই ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু এসব পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে, সেটা সরকারকে এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একইসঙ্গে উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের নিয়মের মধ্যে আনতে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বাজার নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি কর আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু তাই নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় এবং সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ধোঁয়াহীন সব পণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা জরুরি।

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও টিসিআরসির চেয়ারম্যান শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধোঁয়াহীন তামাক বিক্রি হয়, সে অনুযায়ী এই খাত থেকে কর আদায় হয় না। দেশে প্রায় ৭৮৮টি ব্র্যান্ডের ধোঁয়াহীন তামাকের পণ্য রয়েছে যাদের অধিকাংশই ঠিকানাহীন। তাদের সবার তথ্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে নেই। ফলে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপশি ধোঁয়াহীন তামাকপণ্যের প্যাকেজিংয়ে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া এবং প্যাকেজিংবিহীন বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন দ্য ইউনিয়নের বাংলাদেশ শাখার কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা অংশ নেন।