প্রতিনিধি, নওগাঁ : নওগাঁয় সরকারি খাস ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় খারিজ করে দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি), বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নাহারুল ইসলামসহ ভূমি অফিসের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনায় স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই বেশকিছু তদন্ত কার্যক্রম এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা মতিউল হক নওরোজ ও সঞ্জয় কুমার দাস নামে দুই ব্যক্তি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ওপর মহলে দীর্ঘদিন আগে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো ফল হচ্ছিল না। ওই দুই ব্যক্তির অভিযোগকে ভিত্তি করে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত ১১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জতীয় দৈনিকে সংবাদটি প্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে।
অভিযোগকারী নওগাঁর বাসিন্দা সন্তোষ কুমার দাসের ছেলে সঞ্জয় কুমার জানান, নওগাঁ সদর উপজেলার এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নাহারুল ইসলাম সরকারি স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সরকারের ক্ষতিসাধন করেছেন। তার অভিযোগ, সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ডাফইল/৬১ মৌজায় ৮৮৪/১৯৭৮ নম্বর ভিপি কেসে অন্তত তিন কোটি টাকা মূল্যের ২৭ শতক অর্পিত সম্পত্তি সরকারি গেজেটভুক্ত রয়েছে এবং তা লিজগ্রহীতার দখলে আছে। সে সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকায় হোল্ডিংয়ের কার্যক্রম বন্ধও রয়েছে। অথচ সেই অর্পিত সম্পত্তি থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের তিন শতক সম্পত্তি অবৈধভাবে ব্যক্তিমালিকানায় হাট নওগাঁর বাসিন্দা মমতাজ হোসেনের নামে খারিজের আদেশ দিয়েছেন নাহারুল ইসলাম। এতে সরকারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ সম্পত্তিটি মূল সম্পত্তিভুক্ত করার দাবি করেন তিনি।
অপর অভিযোগকারী মতিউল হক নওরোজ জানান, নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র পুরাতন মাছবাজারে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত শ্রেণি হাটখলার প্রায় ৫ শতক জমি মৃত ব্যক্তির নামে খারিজ করে দিয়েছেন তৎকালীন এসি ল্যান্ড নাহারুল ইসলাম। প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ওই সম্পত্তিটি ব্যক্তিমালিকানায় মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নামে খারিজের আদেশ দেন তিনি। পরে স্থানীয়দের মাঝে ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ে। একইসাথে মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নাতনি শাহানা হকের কাছ থেকে খাজনাও আদায় করা হয়েছে।
মতিউল আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী খাস খতিয়ানের সম্পত্তি কেউ দলিলমূলে দাবি করলে তা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আদালতের রায় পাওয়ার আগেই সেই জমি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও ওই সম্পত্তি হাটখলার স্থালে শ্রেণি দোকানঘর উল্লেখ করে খারিজ ও নতুন হোল্ডিং খুলে খাজনা আদায় করা হয়েছে।
ভূমি কর্মকর্তা নাহারুলের বিরুদ্ধে লিখিত এসব অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও তার কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখার নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত শুরু করেছেন নওগাঁ জেলা প্রশাসনের এডিসি (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়। এ বিষয়ে তিনি জানান, অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুতই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত চলমান অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রমের বিস্তারিত এখন বলা সম্ভব নয়।