Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:09 am

নকলায় গড়ে উঠেছে ইকোপার্ক

ইকোপার্ক মানেই জীববৈচিত্র্য, পাখপাখালি ও গাছগাছালির সমাহার। তবে একটু ব্যতিক্রমী ইকোপার্ক গড়ে উঠেছে শেরপুরের নকলায়। প্রায় সাত একর জমির ওপর ধু-ধু ও উত্তপ্ত বালুময় জমিতে গড়ে উঠেছে এই ইকোপার্কটি। এখানে কোনো গাছগাছালি তো দূরের কথা লতাগুল্মও জন্মাত না। বর্তমানে এখানে কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা নানা কৌশল আর গবেষণা করে জন্মিয়েছেন আম, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, আতা, তাল, ছফেদাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বিভিন্ন ঔষধি ও বনজ প্রায় শতাধিক প্রজাতির আড়াই হাজার বৃক্ষ।

প্রথম পর্যায় ওই বালুময় জমিতে কোনো গাছের চারা রোপণ করলে কয়েকদিন পর তা মরে যেত। প্রায় চার বছর গবেষণা করে ওই ইকোপার্কে প্রথমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা লাগিয়ে সফল হন কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। এরপর শুরু হয় ইকোপার্ক গড়ার কাজ।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের উরফা কোদাল দোয়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি ভোগাই ও কালা গাঙ্গ নদী। ২০০৯ সালে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ভোগাই নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণ এবং নদীর নব্য বৃদ্ধির জন্য নদী খননের কাজ শুরু করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নদী খননের বালু ভোগাই ও কালা গাঙ্গের মোহনার তীরে স্তূপাকারে রেখে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ওই বালুর স্তূপের ওপর প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে কেবল স্থানীয় গ্রামবাসীর জন্য ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করে জীববৈচিত্র্য তৈরির জন্য ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেন কৃষিমন্ত্রী।

ওই উত্তপ্ত ও ধু-ধু বালুর মধ্যে প্রথম কয়েক বছর কোনো গাছ তো দূরের কথা কোনো রকমের লতাগুল্ম জন্মাত না। এতে থেমে থাকেনি কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীরা। জামালপুরের হার্টিকালচার বিভাগ এবং বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক মো. এনামূল হক ওই ইকোপার্কে গাছ জন্মানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নানা গবেষণা করে বিশেষ কায়দায় অবশেষে প্রায় চার বছর পর সফল হয়। এরপর পার্কে রোপণ করা হয় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতি ফলদ, ঔষধি ও বনজ প্রায় দুই হাজার পাঁচ শতাধিক গাছের চারা। বর্তমানে ওই ইকোপার্কের বেশ কয়েকটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশীয় নানা প্রজাতির পাখপাখালির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। আর ইকোপার্কের গাছগুলোকে সতেজ ও জীবন্ত রাখতে সার্বক্ষণিক দুজন শ্রমিক নিয়োগ করেছে কৃষি বিভাগ।

ছায়াঘেরা ইকোপার্কের মনোরম পরিবেশ দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। ইকোপার্কের তিন পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাওয়ায় কোদাল দোয়া বাজার থেকে নৌকা করে নদী পার হয়ে পৌঁছতে হয় পার্কে। স্থানীয়রা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালেও কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ইচ্ছা এখানে বাণিজ্যিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো স্থাপনা তৈরি না করে প্রকৃতির মতো ইকোপার্ক গড়ে উঠুক এটি, যেন জীববৈচিত্র্যের এবং পাখির অভয়াশ্রমের কোনো সমস্যা না হয়। তবে ভবিষ্যতে পার্কে যাতায়াতের জন্য এখানে একটি ফুটব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন।

কৃষি বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক এবং ওই ইকোপার্কের বৃক্ষ জন্মানোর গবেষকমো. এনামুল হক বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেও ওই বালুর মধ্যে কোনো গাছ জন্মাতে পারছিলাম না। তাই আমরা অনেক গবেষণা করে বিশেষ কায়দায় মাটি থেকে ছয় থেকে ১০ ইঞ্চি গভীর করে এবং গাছের চারার পারপাশে তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি ফাঁক রেখে চারাগুলো রোপণ করার পর বালুর তাপ থেকে রক্ষা পেয়ে চারাগুলো বাড়তে শুরু করে। একপর্যায় ওই ইকোপার্কের সকল চারা সতেজ হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে বেশ বড় হয়ে উঠেছে। অনেক গাছে ফলও ধরতে শুরু করেছে। এ পদ্ধতি আমাদের কৃষি বিভাগের একটি সাফল্য হিসেবে মনে করি। আশা করি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইকোপার্কটি আরো সবুজ হয়ে উঠবে এবং এখানে দেশীয় নানা পাখপাখালির আবাসস্থল হয়ে উঠবে। আর ফলদ বৃক্ষ থেকে এলাকাবাসী দেশীয় নানা ফল খেতে পারবে।

 

এম এ রফিক, শেরপুর