নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর ‘ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ’ করার লক্ষ্যে একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত চিঠি গতকাল মঙ্গলবার ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বোর্ডে চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কেএএস মুরশিদকে।
ব্যবস্থাপনা বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেনÑব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. ফরিদ আহমেদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসক ও তার সহায়ক দলকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’-এর ১৮ (৪) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে ম্যানেজমেন্ট বোর্ড গঠন করা হলো।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ আগস্ট নগদ পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় ছয়জন কর্মকর্তাকে ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা নগদের কার্যালয়ে গিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বর্তমানে নগদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালে। গ্রাহক ধরতে প্রতিষ্ঠানটিকে একচেটিয়া সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। এ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়মনীতিকে পাশ কাটানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সব সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নেয়। ফলে সরকারি ভাতাভোগীদের বাধ্য হয়ে নগদের গ্রাহক হতে হয়। নগদকে ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও বাস্তবে এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কোনো মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
নগদের মাধ্যমে গ্রাহকরা যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, নগদের মালিকানা ও অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন আছে। এছাড়া নগদে যে পরিমাণ টাকা জমা আছে, নিয়মের বাইরে তার চেয়ে বেশি ডিজিটাল অর্থ তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় এবং কেউ প্রতারিত না হন, সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ রুল দেন। ২০০৪ সালের পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইনের ৩১ (১) ও (২) ধারা প্রতিপালন না করে ‘নগদ’-এ প্রশাসক নিয়োগের গত ২১ আগস্টের মেমো (আদেশ) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অর্থসচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।