নিজস্ব প্রতিবেদক:সড়ক-মাঠ-পার্ক বা যেকোনো গণপরিসরে যদি শিশুরা অনিরাপদ অনুভব করে, তাহলে তারা তা ব্যবহারে আগ্রহী হয় না। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অনুপযোগী পরিবেশ প্রভৃতির ফলে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু শারীরিক কার্যক্রমে সক্রিয় নয়। বাংলাদেশেও শিশুদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা, টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ শিশুদের মধ্যে শারীরিক কার্যক্রমের পরিমাণ, অর্থাৎ খেলাধুলা, সাইকেল চালানো বা হাঁটা প্রভৃতির পরিমাণ অত্যন্ত কম। প্রতিদিন হেঁটে বা সাইকেলে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করা হলে একদিকে যেমন তাদের শারীরিক কার্যক্রমের চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি বন্ধুদের সঙ্গে যাতায়াত করলে মনও ভালো থাকবে।
রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় সাদেক খান রোডে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের সম্মুখে গতকাল ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নগর পরিকল্পনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিতে’ মানববন্ধনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট স্টাডি ২০১০ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৩০ শতাংশ স্কুল ট্রিপ হয় পায়ে হেঁটে। ঢাকা শহরে হাঁটার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। নগর পরিকল্পনায় যদি বিদ্যালয়ে হাঁটা ও সাইকেলে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা হাঁটা ও সাইকেল চালানোয় আগ্রহী হয়ে উঠবে। শিশুদের জন্য হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে সব বয়স ও সক্ষমতার নাগরিকদের জন্যই তা উপকারী হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি বা যান্ত্রিক যানের পরিবর্তে হেঁটে ও সাইকেলে ট্রিপ সংঘটিত হলে তা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও ভূমিকা রাখবে।
মানববন্ধনে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হেঁটে যাতায়াত করে। হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত নিরাপদ হবে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন, যা বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, ভাঙ্গা রাস্তা, গাড়ির গতি, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি কারণে আমাদের হেঁটে যাতায়াতে সমস্যা হয়। অনেক সময়ই আমরা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই। গাড়ির অতিরিক্ত হর্নের কারণে ক্লাস চলাকালে আমরা পড়ায় মনোযোগ দিতে পারি না। আমাদের রায়েরবাজার এলাকায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কার করা হলে আমরা অনেক উপকৃত হব। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি আমাদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছি।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, আগামীকাল (আজ) ওয়ার্ল্ড টাউন প্ল্যানিং ডে। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর নগর পরিকল্পনাবিদ, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ দিবসটি উদ্যাপন করে থাকেন। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, সব নগরবাসীই উপকৃত হবেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক মো. আল আমিন, মিনুয়ারা, মো. জাহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা।