নজর মূল্যস্ফীতিতে, লাগাম টানবে ঋণে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নীতি সুদহার ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংকোচনমূলক পদক্ষেপের পরও মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারিত লক্ষ্যের মধ্যে নামাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মূল্যস্ফীতিতে নজর রেখে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে ব্যাংক ঋণের প্রবাহ আরও কমাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারের মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা আগের মতোই সংকোচনমুখী রাখা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য নিয়ে গত বছরের ১৮ জুন চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো হার) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই আরও তিন দফা নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। পাশাপাশি গত ছয় মাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার প্রায় ৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে চলতি জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা। আর জুনের মধ্যে ৬ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারেনি। কারণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বৃদ্ধি ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধ চলমান ছিল। তাই এর প্রভাব পণ্য মূল্যতে পড়েছে। যার কারণে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কমানো যায়নি।

তারা আরও বলেন, তাই এবারের মুদ্রানীতির অন্যতম নজর মূল্যস্ফীতির দিকেই। এজন্য চলমান সব ধরনের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের প্রবাহ আরও কমতে পারে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোও চলমান থাকবে।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ সময় সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৪৩ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির মতো ঋণ প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ কম। সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের সব দেশেই পলিসি রেট বাড়ানোর প্রচলন আছে। আমরাও সে পথে হেঁটেছি। তবে আমাদের দেশে শুধু পলিসি রেট বাড়িয়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। এখানে একটি গোষ্ঠী বাজারকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া অর্থনৈতিক খাতে সুশাসনের অভাব আছে। প্রভাবশালী একটি পক্ষ অনিয়ম করে আর্থিক খাতকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, এর জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, যাতে কর্মসংস্থান হয়। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম কাজ। তবে ডলার সংকটের কারণে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর প্রভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে তার প্রভাব পড়েছে পণ্যমূল্যে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০