নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোরের আলো ফুটতেই গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পথে ছিল ফুল আর ব্যানার হাতে হাজারো মানুষের ঢল, শোকের গাম্ভীর্য নিয়ে ছোট-বড় সবাই সেই জনস্রোতে যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়ের আগে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের হাতে শহিদ বাঙালির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে।
সেই জনস্রোতে মিশে পাঁচ বছরের মেয়ে নাবিহাত ফেরদৌসকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে নিয়ে আসেন বাবা নাজিম উদ্দিন। মেয়েকে ১৪ ডিসেম্বররের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চান তিনি।
নাজিম উদ্দিনের কথায়, প্রতিবছরই এ বিশেষ দিনে মেয়েকে নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসি। আমি চাই আমার মেয়ে দেশের ইতিহাস জানুক।
ছোট্ট নাবিহাত ফেরদৌসের মতো বাবা-মায়ের হাত ধরে বুধবার ভোরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দেখা যায় শিশু-কিশোরদের। তাদের হাতে ছিল রক্তবর্ণ গোলাপ; অভিভাবকদের কেউ কেউ গল্পের ছলে তাদের বলছিলেন শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পাঁচ ভাতিজা-ভাইঝিকে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দুর্জয় চৌধুরী। সবার হাতে ছিল গোলাপ। অন্যদের মতো তারাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বীর শহিদদের।
তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানাতে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন বলে মত দেন ব্যবসায়ী হাসান আল মামুন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য যে সন্তানেরা প্রাণ দিয়ে গেছেন, তাদের প্রতি সেদিনই সম্মান জানানো হবে, যেদিন দেশের সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে।
পরিবেশকর্মী আবু জায়েদ বলেন, শহিদের রক্তে গড়া এই দেশের প্রকৃত অর্জন সেদিনই হবে, যেদিন আমরা এদেশ থেকে অন্যায়-দুর্নীতি মুছে দিতে পারব। এদেশে যেদিন সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না।
স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আইরিন সুলতানা বলেন, শিক্ষাদীক্ষায়, জ্ঞানে-গরিমায় আমার দেশ এগিয়ে যাবে, আমরা এ প্রত্যাশাই করি। আমরা চাই আমাদের নতুন প্রজন্মইতিহাস জানুক, দেশকে ভালোবাসতে শিখুক।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে। ১৪ ডিসেম্বরের সেই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদায় বুদ্ধিজীবী দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ।
দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে সেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়; বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে সেখানে কুশল বিনিময় করেন সরকারপ্রধান।