কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : নতুন নতুন উদ্ভাবনে জুড়ি মেলা ভার নিরক্ষর সবজিচাষি বাবলু কোম্পানির। বেগুন গাছে টমেটো এমনকি আলু গাছে টমেটোর আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রান্তিক এ চাষি। এছাড়া একটি বেগুন গাছে কলমের মাধ্যমে কয়েক প্রজাতির বেগুন চাষ করেও সফল হয়েছেন বাবলু, যেন সবজি চাষের মেজিশিয়ান বাবলু। যে কোনো সবজি চাষেই সাফল্য ধরা দেয় তার হাতে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান মালিথাপাড়া গ্রামের চাষি বাবলু সর্দার ওরফে বাবলু কোম্পানি (৪৮)। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই তার। তবে মেধার গুণে তিনি উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। বাবলু শুধু সফল সবজিচাষিই নন, নতুন নতুন উদ্ভাবনেও তার জুড়ি নেই। ২০১১ সালের শেষের দিকে তিনি ঢ্যাঁড়শ গাছ থেকে পাটের মতো আঁশ উদ্ভাবন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। ২০১২ সালে রাজধানীতে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত উদ্ভাবনী মেলায় ২৫ স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকের একজন বাবলু।
সফল সবজিচাষি বাবলু কোম্পানি প্রায় এক যুগ ধরে মিরপুর উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় সবজি চাষ করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে একই গাছে দুই ধরনের ফসল ফলিয়েও সাফল্য পাচ্ছেন তিনি। শুধু বেগুন গাছে টমেটো কিংবা আলু গাছে টমেটো চাষ করা নয়, সফল এ সবজিচাষি এর আগে কলাগাছ থেকে রাসায়নিক সার, আতা ও নিমপাতা থেকে কীটনাশক তৈরি এবং ঢ্যাঁড়শ গাছ থেকে পাটের বিকল্প আঁশ উদ্ভাবন করে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
সবজিচাষি বাবলু কোম্পানি বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে পরীক্ষামূলক বেগুন গাছে কলম করে টমেটোর চাষ শুরু করি। একই গাছে বেগুন ও টমেটোর চাষ করে সাফল্য আসে। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছর এই পদ্ধতিতে বেগুন ও টমেটোর চাষ করছি। তিনি আরও বলেন, গত বছর থেকে আলু গাছে টমেটোর চাষ শুরু করেছি। গত বছর বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। এবার আলু গাছে টমেটোর চাষ করেছি। আশা করছি এবারও ভালো ফলন পাব। এ ছাড়া ক্ষেতের আইলে আগাম ভুট্টার আবাদ করেছি। এতে সবজির পাশাপাশি বাড়তি ভুট্টাও পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে লাভবান হচ্ছি।
বাবলু বলেন, প্রথমে আমি চার বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করি, আর ১০ কাঠা জমিতে টমেটো। বেগুন গাছে টমেটো ধরানোর জন্য আমি ১০টি বেগুন গাছে টমেটোর ডোগা কেটে কলম করার মতো করি। সেখানে কিছুদিন পর দেখা যায় টমেটোর ডগাগুলো মারা যায়নি। সেগুলোও বেগুনের ডগার মতো বড় হচ্ছে। এরপর কলম করার মাসখানেক পরে দেখা যায় বেগুন গাছে টমেটোর ডগায় টমেটো ধরেছে। এতে বেগুন গাছ থেকে একইসঙ্গে টমেটো ও বেগুন পাওয়া যায়। একেকটি গাছ থেকে প্রায় তিন কেজি টমেটো পাওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আমি আলু গাছে টমেটোর চাষ শুরু করেছি। এখানেও ভালো ফলন পাচ্ছি।
সফল এ সবজিচাষি বলেন, ২০০০ সালে নিজ গ্রামের তাজ আলী মালিথার এক বিঘা জমি চার হাজার টাকা লিজ নিয়ে ফুলকপি চাষ শুরু করি। পরের বছর একই গ্রামের বগা বিশ্বাসের কাছ থেকে আট হাজার টাকায় দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেগুন, লাউ ও বাঁধাকপি চাষ করি। এরপর বাড়তে থাকে সবজি চাষের প্রসার।
বাবলু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করছি। সবজি চাষ করে অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। তবে বীর মুক্তিযুদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার চাওয়া প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে চাই।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের মুখপাত্র সাংবাদিক হুমায়ুন কবির হিমু বলেন, বাবলু কোম্পানি নিরক্ষর, কিন্তু সফল একজন সবজিচাষি। দীর্ঘদিন ধরেই কিন্তু বাবলু একটার পর একটা সবজি চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন এবং এই বাবলু কোম্পানি এর আগে ঢ্যাঁড়শের গাছ থেকে পাটের মতো আশ উদ্ভাবন করে রীতিমতো মাত করেছিল।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন আর রশিদ বলেন, বাবলু কোম্পানির যে প্রচেষ্টা এটা আমরা সরেজমিনে দেখেছি। আমরা মনে করি, কৃষি সেক্টরে যেসব উদ্যোক্তা বা যেসব বিজ্ঞানী কাজ করছেন, তারা এর সম্ভাব্যতা যাচাই করবেন। উৎপাদন খরচ ও উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য দুটি মিলিয়ে যদি লাভজনক হয়, তাহলে এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে বলে মনে করি।