নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের পূর্বাচলে দুই একর জমি দিয়েছেন। যেখানে আমরা একটি আধুনিক ল্যাব তৈরি করব। তাছাড়া দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেলও গঠন করা হবে। যেখানে উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
কৃষি উদ্যোক্তাদের নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘ভরসার নতুন জানালা’ শীর্ষক কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিসেফ ফাউন্ডেশন, বিকশিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে দিনব্যাপী কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনটিতে ৩৩ জেলা থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি দেশের ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। মুনাফার কথা চিন্তা না করে ব্যাংকগুলো যদি এ খাতকে সেবা খাত হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে কৃষকরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। যার ফলে আমরা কৃষকদের নিয়ে উন্নত দেশে পৌঁছাতে পারব। কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। যাতে কৃষকরা লাভবান ও উন্নত জীবনে পা রাখতে পারেন। কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা গ্রামকে শহরে পরিণত করতে চাই। এ লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজও করে যাচ্ছি।’
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল হাকিম, ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল ও কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সংগঠক ও বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘কৃষক সংলাপ’। এ সংলাপে নোয়াখালীর উদ্যোক্তা মনির হোসেন অভিযোগ করেন, বিএডিসি প্রান্তিক কৃষক নয়, ধনী কৃষকের কাছ থেকে বীজ কেনে। বাণিজ্যিকীকরণের কারণে প্রান্তিক কৃষকরা ঋণ পাচ্ছেন না। জামালপুরের মিজানুর রহমান প্রান্তিক পর্যায়ে শস্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। বরগুনার মিয়া মো. আলামিন শস্যবিমা চালুর দাবি জানান।
ফল বিপণনের সমস্যার কথা তুলে ধরে খাগড়াছড়ির ফলচাষি উদ্যোক্তা সানু মং মারমা অভিযোগ করেন, বাগান থেকে ফল নিয়ে শহরে প্রবেশ করতে গেলে পথে চার ধাপে চাঁদা দিতে হয়। শুধু পৌরসভার নামেই দুইবার চাঁদা নেয়া হয়। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তিনি পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদের জন্য সোলার প্যানেলে মাধ্যমে পানি সরবরাহের দাবি জানান।
বগুড়ার জুয়েলের অভিযোগ, খাসপুকুর সরাসরি মৎস্য চাষিরা পান না। তিন-চার হাত বদল হয়ে তারপর পাওয়া যায়। তখন ইজরামূল্য বেড়ে যায়। সারের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন বগুড়ার আরেক উদ্যোক্তা হাছান। নিবন্ধিত উদ্যোক্তাদের জন্য শস্যভাতা চালুর দাবি জানান, পঞ্চগড়ের ইকবাল হোসেন। সাভারের আবুল কাশেমের অভিযোগ, কারখানার বর্জ্যরে দূষণে মাছের খামারে অক্সিজেন সংকট তৈরি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য সম্পদের। এছাড়া ভেজাল সার বাজারজাত বন্ধ, সারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সংলাপে কৃষি উদ্যোক্তারা তাদের নানা সমস্যার কথা জানান।
এ পর্বে মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এমএ মুয়ীদ, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি টিআইএম জাহিদ হোসেন, ইউসিবির ইভিপি জাভেদ ইকবাল ও ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দা ফাওজিয়া ইয়াসমিন।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য জনপদের মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি এটিএম তাহমিদুজ্জামান এফসিএস এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবু সাইদ মিঞা। সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শওকত জামিল বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিবেশ পেলে কৃষি হতে পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম ভিত্তি। আজকের এই কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনটি দেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের মনে ‘ভরসার নতুন জানালা’ খুলে দেবে। সোনার বাংলা গড়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর ‘উপায়’ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।’