নতুন উদ্যোক্তার মনে আশা জাগানো মেলা

Exif_JPEG_420

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর: প্রাথমিকভাবে আয়োজনটা রোববার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের আগ্রহের কারণে তা একদিন বাড়ানো হয়। বলতে গেলে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ভিড় লেগেই ছিল। পাঠক নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন, এসএমই মেলার কথা বলা হচ্ছে। মেলার সব পণ্য ছিল দেশি। বিদেশি পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিপণন করা হয়নি।

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ পণ্যগুলোর বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও মেলা আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। পাশাপাশি মেলায় পণ্য উৎপাদন ও ভোক্তা সৃষ্টির বিষয়ে দর্শনার্থীদের মতামত ও পরামর্শ যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। শুধু তা-ই নয়, এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটানোও ছিল মেলার উদ্দেশ্য। তাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি আয়োজকরা। এর বাইরে এসএমই উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের মাঝে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন করতেও মেলা সফল হয়েছে বলে জানালেন আয়োজকরা।

বাংলাদেশ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এ ‘জাতীয় এসএমই মেলা’। মেলার আয়োজক ছিল এসএমই ফাউন্ডেশন। সারা দেশ থেকে ২০০টি এসএমই প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এবার। মেলা ঘিরে ২১৬টি স্টলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের পসরা বসে। মেলায় দেশে উৎপাদিত নানা পাটজাতপণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক, হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ অন্যান্য ক্ষুদ্রতর, ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের তৈরি শিল্পপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হয়েছে।

এবারের মেলায় প্রথমবারের মতো ‘নন-ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস টু এসএমই কাস্টমার ফর সাসটেইনেবল এসএমই ফিন্যান্সিং’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজিত হয়েছে। নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও নতুন ভ্যাট আইনে এসএমই ব্যবস্থা নিয়ে এখানে আলোচনা হয়।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এবার পুরুষ ও নারী ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০১৭’ প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এ খাতের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও সৃজনশীল এসএমই খাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় এসএমই ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রতিযোগিতাও আয়োজন করেছে।

এবারের এসএমই মেলার মূল আকর্ষণ ছিল দেশের নানা জেলা থেকে আসা উদ্যোক্তার তৈরি কুটির শিল্পজাতপণ্য। আরও ছিল অর্গানিক পণ্য। তাই শৌখিন ও রুচিশীল মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শন ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে পাটজাত দ্রব্য ছিল নজরকাড়া। এছাড়া ছেলেদের শার্ট, কোট, মেয়েদের কামিজ, ফতুয়াসহ নানা ধরনের পোশাক, শো-পিসসহ ঘর সাজানোর পণ্যও বিক্রি হয়েছে। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল বিভিন্ন ফুলের মধু, আচার, ঘি, বিলুপ্তপ্রায় হরেকরকম ধানের চাল, খই, মুড়ি প্রভৃতি। সুন্দরবনের মধুও বিক্রি হয়েছে মেলায়।

এখানে অর্গানিক চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। প্রসঙ্গত অর্গানিক চাল ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপকারী। তাই প্রচুর বিক্রি হয়েছে এ চাল। অর্গানিক চালের পাশাপাশি ঘি, মধু, আচার ও অন্যান্য হাতে বানানো খাদ্যদ্রব্যও পাওয়া গেছে মেলায়। দাম একটু বেশি হলেও খাঁটি ও নির্ভেজাল পণ্য পেয়ে ক্রেতারা খুশি।

কেজিপ্রতি ঘি’র দাম ছিল ৬০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। মধু ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে ছেলেদের শার্ট। কামিজ ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। শো-পিস বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ব্যাগ ১০০ থেকে দুই হাজার টাকা। জুতা ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। স্যান্ডেল ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে পাটের ফেব্রিকস, থান কাপড়, প্যাকেজিংয়ের মেশিন, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারসহ আনুষঙ্গিক পণ্যের প্রদর্শন ও বিক্রি হয়।

শুধু দর্শনার্থী ও ক্রেতাই নন, অনেক নতুন উদ্যোক্তাও এ মেলায় এসেছিলেন। তারা স্টলে স্টলে ঘুরে সফল উদ্যোক্তাদের গল্প শুনেছেন। তাদের কাজের পরিধি ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা নিয়েছেন। আয়োজকরা বলছেন, নতুনদের ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলে মেলার আয়োজন সফল হবে।

এবারের মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, রক্তদান কর্মসূচি, মিডিয়া সেন্টার, তথ্য কেন্দ্রের স্টল ছিল যা অন্যান্য বছরের আয়োজন থেকে এই আয়োজনকে কিছুটা ভিন্নতা দিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০