Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:21 pm

নতুন কোম্পানি আনতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখছে না

দেশে প্রায় ৬১টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এদের মূল কাজ পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা। ২০১৮ সালে মাত্র ১৪টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা অনুযায়ী এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। এটি মোটেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে বিএসইসিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট রায়হান এম চৌধুরী এবং দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান।
জাকির হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের সামষ্টিক অর্থনীতির কথা যদি বলি বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। দেশে অর্থনৈতিক জোন হচ্ছেÑএটি ছিল ২০১৮ সালের উল্লেখযোগ্য বিষয়। বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হচ্ছে। এছাড়া অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ভালো অবস্থানে ছিল। এটি দেশের জন্য ইতিবাচক। অপর দিকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বেগ ছিল, রাজস্ব আয়ে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি। বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগও তেমন লক্ষ করা যায়নি।
২০১৯ সালের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আদায়। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আদায়ের ওপর জোর দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের প্রধানকে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে। এই টাকা কীভাবে আদায় করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। জিডিপির আকার অনুযায়ী বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি। বেসরকারি বিনিয়োগ পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কীভাবে আকর্ষণ করা যায় বা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। ডুয়িং বিজনেস বা বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ১৯০টি দেশের মধ্যে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশ ১৭৮ নম্বরে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কীভাবে সমাধা করা যায় সর্বোপরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নেতৃত্বকে ধন্যবাদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার আগের দিন অর্থমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির উন্নয়নবিষয়ক অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন। তার সঙ্গে আমরাও আশাবাদী, তিনি নতুন কিছু করতে পারবেন এবং দেশের অর্থনীতি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। দীর্ঘ আট বছর ধরে অর্থনীতি-সম্পর্কিত বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেকবার এ বিষয় নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে। আর্থিক খাতে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, তা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এই বিষয়গুলোয় তিনি কঠোরভাবে নজরদারি করবেন বলে মনে করি। কারণ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। সরকার যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তার বেশিরভাগই মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। এর ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগও অনেক বাড়বে। ২০১৮ সালে চীনের বিখ্যাত দুই স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে বোঝা যাবে তারা আসলে কী করতে চায়। এসব বিষয় বিবেচনা করলে পুঁজিবাজার ২০১৯ সালে ভালো যাবে বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। সে তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির আকার অনেক ছোট। আসলে সঠিকভাবে পুঁজিবাজারকে পরিচালনা করা হয়নি। দেশে প্রায় ৬১টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, এর মূল কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা। ২০১৮ সালে মাত্র ১৪টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা অনুযায়ী তা খুব কম। এটা আসলে মোটেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে বিএসইসিকে নজরদারি রাখতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ