নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রস্তাবিত ড্যাপ (২০১৬-৩৫) ও সংশ্লিষ্ট ‘খসড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০২১’ বাস্তবায়িত হলে ভবনের আয়তন বর্তমানে যা অনুমোদন হচ্ছে, তা থেকে কমপক্ষে ৩৩-৫৩ শতাংশ আয়তন হ্রাস পাবে। ফলে বেড়ে যাবে ফ্ল্যাটের দাম, অধরা থেকে যাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের স্বপ্ন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ ক্রেতা, জমির মালিকসহ আবাসন ব্যবসায়ীরা, যা নাগরিকদের মাঝে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং আসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মতামত তুলে ধরেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ লায়ন শরীফ আলী খানসহ অনেক পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্মিতব্য ভবনের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি এবং দাপ্তরিক ও অন্যান্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যয় একই থাকার কারণে ফ্ল্যাটের দাম ন্যূনতম ৫০ শতাংশ বাড়বে, যার ফলে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা যৌক্তিকভাবে কমে যাবে এবং ‘আবাসন’ সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। এছাড়া ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের ফলে সিরামিক, টাইলস, ইলেকট্রিক কেব্ল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ২৬৯টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে। সর্বোপরি আবাসনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি অশনি সংকেত রূপে দেখা দেবে।
উদাহরণ দিয়ে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, আগে ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮’ মোতাবেক ২০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে সর্বনিম্ন গ্রাউন্ডফ্লোরসহ আটতলা ফ্লোরবিশিষ্ট ভবনে মোট ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত। প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী পঁাচতলা ফ্লোরবিশিষ্ট মোট ৯ হাজার বর্গফুট ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুটের চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে নির্মিতব্য ভবনের উচ্চতা তিন থেকে চারতলার বেশি হবে না এবং আয়তন উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পায়। এ ধরনের চিত্র প্রায় সব ক্ষেত্রে।
আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, আয়তন বা উচ্চতা কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় বটে। তার চেয়ে ঢাকা শহরসংলগ্ন অন্যান্য শহরের সঙ্গে হাইস্পিড কমিউনিকেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ও অন্যান্য নগরীতে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা উন্নয়ন তথা নির্মাণের ব্যবস্থা করা অধিকতর ফলপ্রসূ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত পোষণ করেন, আমরা তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। যতদিন পর্যন্ত এ বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা সুসম্পন্ন না হয়, ততদিন ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর এ প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে। এ প্রচেষ্টার ফলে জন-অসন্তোষ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে এবং আবাসন সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে যেখানে জমি কম, তাই ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে নিরাপদ আবাসনের সু-ব্যবস্থা ও সংখ্যা যত বাড়ানো যায়, ততই আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।
তারা আরও বলেন, নির্মাণযোগ্য ফ্ল্যাটসংখ্যা কমে আসার কারণে বাসাভাড়া সীমাহীনভাবে বাড়বে। বিভিন্ন স্থানে সাবলেট বাড়বে, যা নগরীতে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করবে। অন্যান্য নগরীতে ৫০ থেকে ৫৩ শতাংশ ভবনের আয়তন হ্রাস করার কারণে আবাসনের চাহিদা মেটাতে ফসলি জমিতে ভবন তথা বাসাবাড়ি নির্মাণের একটি প্রবণতা তৈরি হবে। এ কারণে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট দেখা দেবে, যা হবে জাতির জন্য একটি বিরাট বিপর্যয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত ৭ মার্চ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে ড্যাপ-সম্পর্কিত একটি সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং ড্যাপ রিভিউ কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম রিহ্যাব ও বিএলডিএর মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিলেন। আজ পর্যন্ত এ ওয়ার্কিং কমিটির কোনো সভা ডাকা হয়নি। এমনকি স্টেকহোল্ডারদের কোনো সুপারিশও আমলে নেয়া হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের পাশ কাটিয়ে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম কতটুকু সাফল্য আনবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।