নতুন পাকিস্তান গড়তে চান ইমরান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছেন দেশটির সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বিরোধীদের কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন। গতকাল বিকাল ৪টায় প্রথম দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। খবর: বিবিস, এএফপি।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ দেখিয়ে এখন পর্যন্ত সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেনি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সূত্রকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, নির্বাচনী ফলাফল প্রেরণের যান্ত্রিক ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় এখন বিকল্প পদ্ধতিতে ফল একত্রিত করছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘শিগগিরই’ চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
পাকিস্তানের ৩৪২ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৭২টি আসনে। বাকিগুলো সংরক্ষিত আসন। এর মধ্যে ৬০টি নারীদের জন্য ও বাকি ১০টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত।
বুধবার ২৭২টি আসনে নির্বাচনের কথা থাকলেও দুটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে কমপক্ষে ১৩৭টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তানের পত্রিকা ডনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ ভোট গণনার ভিত্তিতে পাওয়া কমিশন ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ১২০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএলএন এগিয়ে রয়েছে ৬১টিতে, আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন পিপিপি ৪১টি আসনে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ইমরান খানকে সরকার গঠন করতে হলে ছোট দলগুলোর সঙ্গে (কোয়ালিশন) জোট গঠন করতে হবে। তারা মনে করছেন, ইমরান খান বড় দলগুলোর দিকে না ঝুঁকে ছোট ছোট দলকে কাছে টানবেন সরকার গঠন করতে।
চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ইমরান বলেন, ‘আমরা সফল হয়েছি, জনগণ আমাদের প্রতি তাদের রায় দিয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশন কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়, সবার। যাদের অভিযোগ আছে আমাদের জানান। আমরা সম্মিলিত হয়ে অভিযোগ তদন্ত করব। আমার মতে, এটাই পাকিস্তানের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিল। যারা কারচুপির অভিযোগ করছেন তাদের সঙ্গে নিয়েই আমি তদন্তে নামতে প্রস্তুত।
পাকিস্তানে এমন সময় এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দুর্নীতির দায়ে আদালত কর্তৃক অযোগ্য ঘোষিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। লন্ডনের ফ্ল্যাট ক্রয় সংক্রান্ত এক দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ইমরানকে পেছন থেকে মদত দিতে নওয়াজকে নির্বাচন পর্যন্ত কারাগারে রাখতে সে দেশের সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ এক হয়ে কাজ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করা হয়েছে নওয়াজের পরিবারকে।
ভাষণে ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তানে এ সরকারই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালাবে না। পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকা জানিয়েছে, ভাষণে ইমরান খান দেশে বৃহত্তর সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের জন্য সর্বাত্মক নীতি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সে সঙ্গে ভোট নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদেরও এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ভোট নিয়ে সব অভিযোগ নাকচ করেও ইমরান বলেছেন, বুধবারের এ নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু হয়েছে।
একটি নতুন পাকিস্তান গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইমরান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী হবে। প্রত্যেককেই প্রত্যেকের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। প্রথমে আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকব। তারপর থাকবে আমার মন্ত্রীরা ও অন্যরা।
দারিদ্র্য দূর করা এবং দেশের সম্পদ বাড়িয়ে অবস্থার উন্নতি ঘটানোরও সংকল্প ব্যক্ত করেন সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রীর বিশাল বাসভবনে থাকা তার জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে ইমরান বলেন, এ বাড়িটিকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এ ধরনের অন্য কোনো কিছু করা যায় কিনাÑসে ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে চীন, আফগানিস্তান এবং ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন ইমরান। ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়পক্ষের জন্যই লাভজনক একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান বলে জানান।
গ্যালাপ পাকিস্তানের জনমত জরিপকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বুধবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ
নির্বাচনের আগে ইমরান খান বিবিসিকে বলেন, জিতলে তার নজরের কেন্দ্রে থাকবে পাকিস্তানের অর্থনীতি। পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মূল্যমান সম্প্রতি ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েই চলেছে।
চীন থেকে আসা সস্তা কাপড়-চোপড় আসায় পাকিস্তানের বস্ত্র খাত সংকটে পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা সাবধান করছেন, ২০১৩ সালের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানকে হয়তো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে যেতে হবে।
বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি বলছেন, সরকারি ব্যয় সংকোচনসহ কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরবর্তী সরকারকে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০