Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:38 pm

নতুন পে-স্কেল নয় আলোচনায় মহার্ঘ ভাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল কার্যকর হয় প্রায় আট বছর আগে, ২০১৫ সালে। দীর্ঘ এ সময়ে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন সরকারি কর্মচারীরা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংসদ অধিবেশনে পে-স্কেলের বিষয়ে তোলা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানান, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নতুন করে পে-স্কেল দেয়া সম্ভব নয়। একই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই যুক্তিতে পে-স্কেলের দাবি একরকম খারিজ করে দিয়েছেন।

তারপরও নির্বাচনী বছর হওয়ায় পে-স্কেল পাওয়ার একটা ‘আশা’ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। কিন্তু তাদের আশা অপূর্ণই থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে পে-স্কেল নয়, আগামী অর্থবছরে মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার একটা ‘সুসংবাদ’ পেতে পারেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

মহার্ঘ ভাতার ক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের দাবি হলো ৫০ শতাংশ। তাদের এ দাবিও পূরণ হচ্ছে না। সূত্র বলছে, সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা দেয়া হতে পারে।

এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে যে কয়টি মহার্ঘ ভাতা দেয়া হয়েছে সবকটি ছিল ২০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৩ সালেও ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিয়েছিল বর্তমান সরকার। ওই সময় সর্বনি¤œ ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন বেড়েছিল।

অর্থ বিভাগের বাজেট শাখার সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ নিয়ে একটি চূড়ান্ত বৈঠক হবে। বৈঠকটি ১০ ও ১২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বাজেটের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দিকে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবে সরকার। এর আগে যে কয়টি পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে তা বাজেটের ঘোষণার দুই-তিন মাস পর ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা যে মাসেই হোক না কেন তা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।

ব্যাখ্যা হিসেবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটে এ খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয় না। অন্য কোনো একটি খাত থেকে থোক বরাদ্দ এনে বরাদ্দ দেয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরিজীবী ১৪ লাখের কিছু বেশি। স্বায়ত্তশাসিত, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এ সংখ্যক কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা শুধু মূল বেতনের ওপর দেয়া হবে। সে হিসেবে সবাইকে ১০ শতাংশ হারে দিলে ৪ হাজার কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ৬ হাজার এবং ২০ শতাংশ হারে দিলে সর্বোচ্চ ৮ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না ফলে তাদের বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতায় বাড়ি ভাড়া বাড়ে না। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সিলিং তৈরি করে শুধু মূল বেতন বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হবে। যদি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে একজন সরকারি কর্মচারীর বেতন সর্বনি¤œ বাড়বে ১ হাজার ৬৫০ থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারের জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সব সদস্য এ মহার্ঘ ভাতা পাবেন। এছাড়া এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ ভাতা পাবেন। একই সঙ্গে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্য মূল বেতনের ভিত্তিতে এ ভাতা পাবেন।

বাড়বে চিকিৎসা, শিক্ষা ও টিফিন ভাতা

চলতি বছর ডিসি সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও টিফিন ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। ডিসিদের এ প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ তিনটি ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি জানান, গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষা ভাতা এক সন্তানদের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য এক হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা, টিফিন ভাতা গ্রেড অনুসারে ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে।

জীবনযাত্রার ব্যয় কত বেড়েছে

২০১৫ সালে শতভাগ বেতন ভাতা বাড়িয়ে ৮ম পে-স্কেল ঘোষণার পর মহার্ঘ ভাতা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে ক্ষেত্র-বিশেষে ১৫০ শতাংশ। ৫ শতাংশের মুদ্রাস্ফীতি এখন ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

সরকারি কর্মচারীরা বলছেন, ৮ম পে-স্কেল অনুযায়ী প্রতি বছর জুলাইয়ে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এই ইনক্রিমেন্ট চলমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। এ পে-স্কেলে বলা ছিল, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেতন-ভাতা সমন্বয় করে বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু গত আট বছরে বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলেও বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের ঘরেই রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ শতাংশে, যা বর্তমান অর্থবছরের মূল বাজেটের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল।