শেয়ার বিজ ডেস্ক: শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী সরকার বিরোধীদের রাষ্ট্রপতির ভবন এলাকা থেকে হটিয়ে দেয়ার পর গতকাল শুক্রবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী দিনেশ গুণাবর্ধনে শপথ নিয়েছেন। এরপরই শপথ নেন শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতার ‘বলপ্রয়োগ’ করে দেশটির নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা। রাতেই রাজধানী কলম্বোর রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের সেনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। গতকাল সকালে পার্শ্ববর্তী ‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে বহু তাঁবুও ধ্বংস করে দেয় সৈন্যরা। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
শ্রীলঙ্কার শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিনেশ গুণাবর্ধনেকে নিয়োগ দেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তথা প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র বলেই অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার স্কুল সহপাঠী দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সী গুণাবর্ধনে নিজেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।
মূলত মধ্যরাতে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গত ১০৪ দিন ধরে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া এবং তাদের বেশ কয়েকজনকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর গুণাবর্ধনেকে নিয়োগ দেয়া হলো।
রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের উপস্থিতিতে শুক্রবার শপথ নেন শ্রীলঙ্কার শাসক দল পোডুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) একজন সাবেক মন্ত্রী দিনেশ গুণাবর্ধনে। এ সময় আইনপ্রণেতা এবং কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেখানে ইউনিফর্ম পরা সামরিক অফিসাররা সামনে বসে ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা এরপরই শপথ নেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ফলে নজিরবিহীন এ সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারসহ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করে শ্রীলঙ্কায় গণ-আন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এমনকি রাজাপাকসে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকার থেকে সরে এসেছিলেন।
বাকি ছিলেন কেবল দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। গত সপ্তাহের বুধবার তার পদত্যাগের কথা থাকলেও দিনের আলো ফোটার আগেই সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। পরে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তিনিও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছাড়েন।
এরপর গত ১৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গত ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা।