মাহমুদুল হক আনসারী: খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৩কে স্বাগত জানাই। ২০২২ সাল কেমন গেছে সেটা বলে লিখে পেছনে যেতে চাই না। তবুও বিগত বছরের কিছু কথা স্মৃতি কথায় কথায় এসে যায়। পুরোনো বছরটা পাওয়া না পাওয়ার অনেক কথা আছে। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক ভালো ছিলাম। রাজনৈতিক হাঙ্গামা, হরতাল, ধর্মঘট, জ্বালাওপোড়াও ছিল না। মহামারি করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপকভাবে সফলতা অর্জিত হয়। শিক্ষার পাঠকার্যক্রম চালু হয়। ছাত্র-ছাত্রী তাদের পাঠকার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছে। ব্যাপকভাবে শহর ও গ্রামে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। দেশের রোড ঘাট কালভার্ট ব্রিজের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে।
সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখার মতো সফলতা অর্জিত হয়েছে। রাস্তা ঘাটের উন্নয়নে মানুষ যাতায়াতে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং দিন দিন এ অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহতভাবে চলছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে দেশের আমজনতা মহা খুশি। তবে বিগত বছরে সফলতার সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে জনগণ সরকারের প্রতি রাগ ও অভিমানী হয়ে উঠেছে। যেমন দ্রব্যমূল্যের অনিয়ান্ত্রিত গতি। ওষুধপত্রের আকাশচুম্বি মূল্য বৃদ্ধি। পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি। অফিস-আদালতে ভোগান্তি ও হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের বেতন ভাতা বৃদ্ধি না হলে ও ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। এসব কারণে জনগণ একটু পারিবারিকভাবে চাপের মধ্যে এখনও আছে।
ব্যয়ভার জনগণ সামলাতে পারছে না। মানুষ করোনাকে জয় করতে পারলেও জীবনযাপনের ব্যয়ভার সামলাতে পারছে না। সেদিকে দেশের মানুষ খুবই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে আছে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার স্থান ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের সংবাদে জনগণ ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ তুলে ফেলার দৃশ্য দেখা যায়। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা মেরে খাওয়ার প্রবণতা জনগণ দেখতে পেয়েছে। ফলে আমানতদারী জনগণ অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাতে যাচ্ছে জনগণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পরিস্থিতি দুনিয়ার মানুষকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলছে। সে পরিস্থিতি বাংলাদেশেও নানাভাবে প্রভাব ফেলেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। খুন, হত্যা, রাহাজানি, ছিনতাই, অনেকটা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এটা অনেক বড় সফলতা। মোটামোটিভাবে বিগত বছরে জনগণ স্বস্তির মধ্যে ছিল বলে বলা যায়।
আগামী বছর কেমন যাবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সে কথা আগাম বলা মুশকিল, জাতীয় নির্বাচন সামনে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নানামুখী কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে, তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভিন্নভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী জোট ও দলের কর্মসূচি কী হবে এবং কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে সে বিষয়গুলো এখন জনগণের পর্যালোচনায় রয়েছে।
তবু ও বলা যায় ২০২৩ সালটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অস্থিরতার সময় বলে মনে হয়। যদি রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ধর্মঘট হরতাল দেখা দেয়, তাহলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, আমদানি, রপ্তানি সব কিছুর মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
জনগণ চায় না দেশে হিংসা করে হাঙ্গামা বাঁধুক। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক, যথাসময়ে নির্যাতন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হোক, জনগণ ও রাজনৈতিক দল জোট তারা ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে লালন পালন করুক সেটায় জনগণের চিন্তা ও মতামত, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও পরিবেশ সাধারণ মানুষ চায় না আর যারা বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্য জনবিরোধী কর্মকাণ্ড করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে কোনো বাধার কারণ নেই; নতুন বছর দেশ-জাতির জন্য সার্বিক সফলতা বয়ে আনুক। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শান্তি ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হোক, দুনিয়ার সব মানুষ ও প্রাণী শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীতে বাস করুক। জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক, অন্যায়ভাবে জুলুম ব্যাভিচার নির্যাতন বন্ধ হোক, ধর্মীয়ভাব সম্প্রীতি অব্যাহত থাকুক।
বাংলাদেশের জনগণের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় সরকারের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন সঠিক নিয়মে অব্যাহত রাথতে হবে। নতুন বছরে অফিস- আদালত, সেবা খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণ করতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য যেভাবেই হোক ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে, রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারি পরিবহন খাত, বিমান, রেল, নৌ-স্থল খাতকে দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালনা করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করে আদর্শিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ২০২৩ সালকে সুস্বাগতম।
মুক্ত লেখক
চট্টগ্রাম