মহাকালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিল আরেকটি বছর। শুরু হলো খ্রিষ্টীয় নতুন বর্ষ ২০২৪ সালের প্রথম দিন। গত বছরের দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন বছরের প্রথম মুহূর্তে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন আশা নিয়ে বরণ করছে ২০২৪ সালকে। বিশ্বজুড়ে এবারও কোটি কোটি মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে।
গতকাল যে বছরটি আমরা পার করে এলাম, তা আর ফিরে আসবে না। গত বছরের যে বিষয় আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না, নতুন বছরে ওই ধরনের বিষয় যেন সংঘটিত না হয়, সেটিই প্রত্যাশা।
২০২৩ সালে দেশে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। শাহজালাল বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নাগরিকের মনে যেমন আশার সঞ্চার করেছে, তেমনই অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেমন আবশ্যক; সর্বজনীন ভোটাধিকারবিহীন উন্নয়নও কাম্য নয়। নতুন বছরে উন্নয়নও থাকুক, আপামর জনসাধারণের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশও থাকুক।
দেশের রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সমাধান করতে হবে, বাইরের কেউ এসে সমাধান করে দেবে নাÑএ কথা যেমন সত্য, তেমনি এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের সমস্যার সমাধান না করলে বাইরের লোকের খবরদারির সুযোগ তৈরি হয়। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। কারও নৈতিক ও মৌলিক অধিকার যেন উন্নয়নের চাপায় পিষ্ট না হয়। যারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, তারা যেন অস্বস্তিতে না পড়ে এই ভেবে যে, তারা বিচারবিবেচনা বোধহীনদেরই সহায়তা করছে। সহায়তা প্রার্থী অন্যদের প্রতিও অন্যায় হয়, যখন নীতিমালা মেনেও তারা সহায়তা ও আনুকূল্য পেতে ব্যর্থ হয়।
প্রতি নববর্ষ মানেই সবার মধ্যে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা; বিগত বছরের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া। পুরোনো বছরের ভুলগুলো শুধরে ইতিহাস থেকে ভালো ভালো শিক্ষা নেয় এবং অতীতের সফলতা-ব্যর্থতাকে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদের সামনের দিকে যেতে হবে। নতুনের প্রতি সবসময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ। নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। নতুন বছর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিক।
সময়ের চক্রে আর কখনোই ফিরবে না ২০২৩ সাল। তবে বছরটির রেখে যাওয়া স্মৃতি-বিস্মৃতি আলোড়িত হবে প্রকৃতি-পরিবেশ-মনুষ্য সভ্যতায়। বিশ্বের কোনো দেশেরই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শান্তিতে নেই। তাদের নিয়তি তারা শোষণ বঞ্চনার শিকারে পরিণত; নিষ্পেষিত অমানবিক বৈষম্যে। বস্তুবাদের ভোগবাদী ক্ষমতাসীনরা কখনও জনগণের বন্ধু হয় না, হয় ধনীদের! ওই ধরনের দেশের কাতারে পড়ুক প্রিয় জš§ভূমি। নতুন বছরে আমাদের সমাজ এভাবে গড়ে উঠুক, যাতে সভ্যতা ও মানবতা গুরুত্ব পায়। নিঃস্ব হাতপাতা মানুষের অসহায়ত্ব দূর করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিলেই তারা ভরসা পাবে, বেঁচে থাকার শক্তি পাবে। মনুষ্যত্ববিহীন সমাজ সভ্যতাকে ধারণ করে না। নতুন বছরে আমাদের সমাজ সভ্যতা ও নৈতিকতাকে ধারণ করবে বলেই প্রত্যাশা।