২০২৩ সালের পুরো সময়জুড়ে নানা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে মসলা জাতীয় পণ্য নিয়ে কারসাজি বেশি হয়েছে। বছরের শুরুতে অনেক পণ্যের যে দাম ছিল বছর শেষে তা কোনোটির ক্ষেত্রে দ্বিগুণ-তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দামে এমন উল্লম্ফন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল ‘নিত্যপণ্যে দফায় দফায় অস্থিরতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের ভাষ্য মতে, ২০২৩ সালে সারা বছরজুড়েই একেক সময় একেক পণ্য নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পেঁয়াজ ও গোল আলুর দাম নিয়ে অস্থিরতা চলছে বজারে। এছাড়া রসুন, শুকনো মরিচ, জিরা, আদা, চিনি ও ডিমের দাম নিয়ে একপ্রকার হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে গেছে। বিশেষ করে বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময়জুড়ে দেশে ডিমের দাম নিয়ে অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। এমনকি ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার আমদানির ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। যদিও খুব বেশি ডিম আমদানি হয়নি। তবে আমদানি করার ঘোষণার পরপরই ডিমের দাম হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া মাংস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন প্রায় পুরো বছরজুড়ে। শেষ সময়ে এসে একজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে গরুর মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ২০০ টাকা হ্রাস পায়। এতে বোঝায় যায়, ব্যবসায়ীরা কীভাবে সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে মানুষের পকেট কাটছে।
এছাড়া ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতম রূপ প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। আগে কেবল ঢাকার অন্যান্য বড় শহরে এ রোগ সীমাবদ্ধ থাকলেও, ২০২৩ সালে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আর ডেঙ্গু রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য চিকিৎসক ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে করে ডাবের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। এই বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে ডাবের আড়তদাররাও সিন্ডিকেট করে এটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সবমিলে পুরো বাজার ব্যবস্থাই ছিল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। আর দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের তরফ থেকে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের সে উদ্যোগ বাজার নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ চলে গেছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে। বাজারে এ অস্থিরতার মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কোনো কোনো মাসে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অন্যদিকে সরকার বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজারের প্রকৃত চিত্রের কোনো সংগতিই নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছরে যাতে ভোক্তারা নতুন করে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে আরও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য না হন, সে বিষয়টি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস।