শেয়ার বিজ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হতাহত সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি উপলক্ষে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা বলেন। খবর-বাসস।
ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, সাংবাদিক এবং অন্যান্য পেশাজীবী, যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, সবাইকে স্মরণ করে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ছাত্র বিপ্লবে জঘন্য হত্যাকাণ্ডে নিহত সবাইকে স্মরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জানাই।’
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আজ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি হলো।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাস উদযাপন করছি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র এবং সর্বস্তরের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমি অভিবাদন জানাই হাজার হাজার মানুষকেও যারা আহত হয়েছেন, প্রাণঘাতী আঘাতের শিকার হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, কিংবা চক্ষু হারিয়েছেন।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৃশংস গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র এবং একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশকে এর পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের।’
তিনি বলেন, শহিদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই এবং এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত মাসে আমাকে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তখন আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং সব জানা-অজানা শহিদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
তরুণরা বিপ্লবের নায়ক উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনো নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছ এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চিরবিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছ।’ ‘বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ এবং সারাদেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছ’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি জানি, তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদেরকে ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজšে§র দরকার।’ বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মাত্র একমাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’ তিনি উল্লেখ করেন, গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।