নতুন মুদ্রানীতি যেন পুঁজিবাজারবান্ধব হয়

চলতি মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। সবার প্রত্যাশা মুদ্রানীতি যেন পুঁজিবাজারবান্ধব হয়। এতে দেশের পুঁজিবাজার গতিশীল অবস্থানে যেতে পারবে। মুদ্রানীতি ঘোষণার মূল কারণ টাকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিষয়টি এমন যে, আর্থিক খাত থেকে কিছু টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। যাতে পুঁজিবাজারে নতুন মূলধন আসতে পারে। নতুন করে আরও অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোশতাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এম শাহজাহান মিনা, বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি রিয়াদ মতিন ও সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী।
এম শাহজাহান মিনা বলেন, কয়েক বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পুঁজিবাজারও খারাপ অবস্থানে ছিল। মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানি মাকের্টে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা ছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারবান্ধব ছিল না। এর ফলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই বলেছেন, আর্থিক খাত এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি এটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় তাকে সাধুবাদ জানাই।
বিগত বছরে যেসব মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পুঁজিবাজারের বিষয়টি উহ্য রাখা হতো। আবার নীতিনির্ধারকদের কিছু কিছু মন্তব্য সরাসরি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আশা করি মুদ্রানীতি ঘোষণা এমন হবে যে, আর্থিক খাত থেকে কিছু টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হতে পারে। কারণ, মুদ্রানীতির সঙ্গে শুধু স্বল্পমেয়াদি নয়, দীর্ঘমেয়াদি কিছু ব্যাপারও জড়িত। সুতরাং পুঁজিবাজারে নতুন মূলধন যেন আসতে পারে। যদি নতুন করে আরও অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়, সেক্ষেত্রে বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। গত ৯ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে নীতিগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং আইপিওর মাধ্যমে অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩৫০টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। আবার অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর মধ্যে এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে অবমূল্যায়িত ছিল এমন অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গড় লেনদেন, বাজার মূলধন বেড়েছে এবং সূচকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সূচক দুই থেকে তিন দিন বাড়লে সেটি আবার সংশোধন হচ্ছে। কাজেই এটিকে স্বাভাবিক পুঁজিবাজার বলা যেতে পারে। এখন যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, তারা যদি স্বাভাবিক আচরণ করে এবং ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
গত মেয়াদে সরকার প্রায় ১৬টি সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তালিকা তৈরি ও তারিখ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আরেকটি কারণ হচ্ছে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতায় থাকতে হবে। ফলে অনেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। নতুন সরকার ও নতুন অর্থমন্ত্রীর কাছে অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। দু-তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এতে পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হবে।
রিয়াদ মতিন বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার ভালো বোঝেন এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সে কারণে তার কাছে পুঁজিবাজার উন্নয়নে অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম বিরাজমান। সেটিকে কীভাবে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়Ñসে চেষ্টা করতে হবে। আবার দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ সময় পুঁজিবাজারের বিপক্ষে যায়। ফলে পুঁজিবাজার কাক্সিক্ষত অবস্থানে যেতে পারে না। বিষয়গুলো নতুন অর্থমন্ত্রী বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট এ দুটি খাত আলাদাভাবে কাজ করে। ক্যাপিটাল মার্কেটের কাজ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আর মানি মার্কেটের স্বল্পমেয়াদি। এখন কথা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে, সেখানে বলা থাকে না স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কী প্রভাব পড়তে পারে। আসলে এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি’র মধ্যে কোনো সমন্বয় হয় না। ফলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আর্থিক খাতের অনিয়ম নিয়ে কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে। বিগত ১০ বছর তিনি মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন এবং বিষয়গুলো দেখেছেন। তিনি তার কথা রাখবেন আশা করি। চলতি মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে পুঁজিবাজারবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০