নতুন শেয়ার হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক স্থিতিশীল থাকার কারণে নতুন শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বাজারে কোনো নতুন শেয়ার এলেই তা কিনতে প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। প্রতিটি শেয়ারের জন্য ক্রেতার ভিড় থাকলেও কাক্সিক্ষত দর না পেয়ে বিক্রেতা হাতে থাকা শেয়ার ছাড়ছেন না। মূলত প্রথম কার্যদিবস থেকে আইপিওর শেয়ারে মূল্যসীমা (সার্কিট ব্রেকার) থাকার কারণেই এমন হয়েছে। গত সোমবার বাজারে তালিকাভুক্ত ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে।

দুই দিনের বাজার চিত্রে দেখা যায়, দুই দিনই নতুন কোম্পানি ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন শুরু হলে ক্রেতাদের ভিড়। প্রথম দিন লেনদেন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই প্রায় পাঁচ কোটি (এক লাখ লট) শেয়ারের ক্রয় আদেশ দেখা যায়। কিন্তু এর বিপরীতে বিক্রেতা ছিল না একজনও। কিছুক্ষণ এভাবে লেনদেন চলার পর একজন বিক্রেতাকে শেয়ার বিক্রি করতে দেখা যায়। ফলে সারাদিনে এই কোম্পানির মাত্র এক লট শেয়ার (৫০০টি) বিক্রি হয়। শেয়ার না পেয়ে একসময় অনেক ক্রেতা তাদের ক্রয় আদেশ বাতিল করতে বাধ্য হন। এরপরও দিন শেষে এই কোম্পানির তিন কোটি ৩০ লাখ শেয়ারের ক্রয় আদেশ ছিল। পরের কার্যদিবসে অর্থাৎ গতকালও এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন ক্রেতার ভিড় থাকলে দিন শেষে এক লটের কিছু বেশি শেয়ার (৬০০) বিক্রি হয়।

শেয়ার বিক্রি না করার কারণ: একটা সময় পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে প্রথম দুই কার্যদিবসে শেয়ারদর বৃদ্ধির কোনো মূল্যসীমা থাকত না। ফলে এই সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ শেয়ারই অতিমূল্যায়িত হয়ে যেত। না বুঝে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন অনেকে। একসময়ে দর কমে গেলে এর ফল ভোগ করতে হতো এসব ভুক্তভোগীর। অনেক সময় কারসাজিকারীও লেনদেনের প্রথম দিকে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে ফেলতেন। এর লাগাম টানতেই বিএসইসি থেকে নতুন নিয়ম জারি করা হয়। সেই মতে, কোনো শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হলে প্রথম দুদিন তার ওপেনিং প্রাইসের ৫০ শতাংশের বেশি দর বাড়তে পারবে না। পরের কার্যদিবস থেকে ওই শেয়ারটি বাজারের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের মতো স্বাভাবিক নিয়মে লেনদেন হবে। মূলত এই নিয়মের জাঁতাকলে পড়েই আইপিওর শেয়ার প্রথম দিন থেকে অস্বাভাবিকহারে বাড়তে পারছে না।

এদিকে নতুন শেয়ারে প্রথমদিন থেকে মূল্যসীমা থাকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, এর ফলে লেনদেনের প্রথম দিন থেকে নতুন শেয়ার নিয়ে কৃত্রিম দর বাড়ানো বা কারসাজির পথ বন্ধ হয়েছে। আইপিও বিজয়ীরা কম লাভবান হলেও এটা সার্বিকভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, আইপিওর শেয়ারে সার্কিট ব্রেকার থাকা ভালো। কারণ এতে কেউ চাইলে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে ফায়দা হাসিল করতে পারে না। শেয়ার অতিমূল্যায়িত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। আগে অনেক শেয়ারই লেনদেনের প্রথম দিনে অতিমূল্যায়িত হয়েছে। এখন সেই পথ রুদ্ধ হয়েছে, এটা সবার জন্যই ভালো।

অন্যদিকে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, নতুন শেয়ারে প্রথম দিন থেকে মূল্যসীমা দুদিনের বদলে তিনদিন করা উচিত। অর্থাৎ তারা চান লেনদেন শুরুর প্রথম তিন দিন ৫০ শতাংশ করে দর বাড়ার সীমা থাকুক।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে একটি ব্রোকারেজ হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যারা আইপিওর শেয়ার পান তাদের প্রত্যাশা থাকে একটু বেশি দরে বিক্রি করা। সে ক্ষেত্রে নতুন শেয়ারের মূল্যসীমা বৃদ্ধির সময় দুদিনের বদলে তিন দিন করা যেতে পারে। এতে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হবে বলে মনে হয় না মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, লেনদেনের শুরুতে সার্কিট ব্রেকার না থাকলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ শেয়ার বিভিন্ন কারণে অতিমূল্যায়িত হতে পারে।

অন্যদিকে বিষয়টিতে ভিন্নমত পোষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন শেয়ারে যদি দুদিনের পরিবর্তে তিন বা চার দিন ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধির অনুমতি দেয়া হয়, তবে বেশিরভাগ শেয়ারই অতিমূল্যায়িত হয়ে যাবে। তাই এ সুযোগ নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০