নতুন ২৮ কর অঞ্চল স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

রহমত রহমান: অবশেষে আয়কর বিভাগের কলেবর বাড়ছে। ১১ বছর পর এই বিভাগের সম্প্রসারণ হচ্ছে। করজাল বাড়াতে নতুন ২০টি কর অঞ্চল, চারটি বিশেষায়িত ইউনিট ও চারটি আপিল অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। আধুনিক, যুগোপযোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুযায়ী আয়কর প্রশাসনকে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন কর অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ২৮টি কর অঞ্চল স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এতে জনবল বাড়বে চার হাজার ৬০০ জন। গতকাল মঙ্গলবার এই অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে আয়কর বিভাগের সম্প্রসারণের দীর্ঘ জটিলতা কেটেছে। এনবিআর বলছে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অন্যতম হলো আয়কর। নতুন কর অঞ্চল স্থাপিত হলে করজাল ও কর আদায় বাড়বে। দ্রুততার সঙ্গে কর অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু করবে এনবিআর। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, নতুন ২৮ কর অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি সম্প্রতি প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন কর অঞ্চল স্থাপিত হলে ক্যাডার কর্মকর্তাদের (সহকারী কর কমিশনার থেকে কর কমিশনার) পদোন্নতি দিয়ে নতুন কর অঞ্চলে পদায়ন এবং কর্মচারী পদে নতুন লোকবল নিয়োগ দেবে এনবিআর। আয়কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দেয় এনবিআর। ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট, আয়কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট, আন্তর্জাতিক কর ইউনিট, উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, ঢাকায় ১৩টি কর অঞ্চল, চট্টগ্রামে তিনটি, খুলনায় তিনটি, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে একটিসহ মোট ২০টি নতুন কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে করজাল বিস্তৃত করতে নতুন কর অঞ্চলের পাশাপাশি গ্রোথ সেন্টার স্থাপন করা হবে, যা কর আদায় বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সূত্র আরও জানায়, ২০২২ সালে আয়কর প্রশাসন সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনবিআর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। এই

চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রসারণের প্রস্তাব সচিব কমিটিতে উঠে। সচিব কমিটি অনুমোদন দিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন কর অঞ্চল স্থাপনে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে তিন ধাপে নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে পুরোনো কর অঞ্চলের সার্কেল অফিস উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করার উদ্যোগও নেয়া হবে।

সূত্রমতে, প্রথম পর্যায়ে ১৩টি (১০টি কর অঞ্চল ও তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট)। ঢাকায় কর অঞ্চল-১৬ থেকে কর অঞ্চল-২৫ পর্যন্ত; আয়কর গোয়েন্দা; ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ও উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯টি কর অঞ্চল (কক্সবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, দিনাজপুর, ফরিদপুর, নরসিংদী, কর অঞ্চল-৫ ও ৬ চট্টগ্রাম)। তৃতীয় পর্যায়ে চারটি আপিল (দুটি ঢাকায়, একটি চট্টগ্রামে, একটি রংপুরে) কর অঞ্চল পাবনা এবং বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক কর ইউনিট স্থাপিত হবে।

এনবিআরের তথ্যমতে, আয়কর বিভাগে বর্তমানে দুটি বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে একটি কর পরিদর্শন পরিদপ্তর, যেটি সারাদেশের সব কর অঞ্চলের কর ফাইল নিয়ে কাজ করতে পারে। অন্যটি বিসিএস (কর একাডেমি), যেটি কর বিভাগের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে। আরও চারটি বিশেষায়িত দপ্তর বা ইউনিটের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট; আয়কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট; কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং আন্তর্জাতিক কর ইউনিট ও উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের দপ্তর রয়েছে।

ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট সম্পর্কে বলা হয়েছে, আয়কর ব্যবস্থার অটোমেশন ও ডিজিটাল কর ব্যবস্থাপনার জন্য এ ধরনের দপ্তরের আবশ্যিকতা অনস্বীকার্য। আয়কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বহিঃউৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্তের মাধ্যমে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, কর আদায় বৃদ্ধি ও কর ফাঁকি প্রতিরোধের জন্য এ ধরনের দপ্তর অপরিহার্য। এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে দুটি গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর রয়েছে। উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট সম্পর্কে বলা হয়েছে, আয়কর খাতের মোট রাজস্বের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎসে কর খাতে আদায় হয়। উৎসে কর কর্তন নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই খাতে আরও আদায় করার জন্য এই দপ্তরের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক কর ইউনিট সম্পর্কে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন বৃদ্ধি এবং ভার্চুয়াল অর্থনীতির বিকাশের কারণে সনাতনী কর ইউনিটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক করদাতার কর পরিপালন নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের ফাইলে সই করেছেন। গেজেট প্রকাশ করা হবে। এরপর এনবিআর নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু করবে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু করা নির্ভর করছে। তিনি আরও বলেন, করদাতার সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা যে হারে বেড়েছে, সেজন্য এখনই নতুন কর অঞ্চল স্থাপন করা উচিত। নতুন কর অঞ্চল ও বিশেষায়িত কর ইউনিটগুলো স্থাপন করা হলে একদিকে প্রচুর করদাতা বাড়বে, অন্যদিকে করনেট সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০