Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 1:26 pm

নদীতীরের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাঙন থেকে রক্ষা করতে নদীর পাড়ে ঝুঁকিতে থাকা থাকা স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদরাসা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এমন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছেন বা আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেক জায়গায় নদী বড় বড় বিল্ডিং চোখের সামনে খেয়ে ফেলেছে। কয়েক দিন আগে ছবি দেখলাম কোন চ্যানেলে, সুন্দর একটা নতুন প্রাইমারি স্কুল একদম তরতাজা, কিছুক্ষণের মধ্যে খেয়ে ফেলল নদী। এটা প্রায়ই হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মন্তব্য করলেন, আমরা যে নদীর পাড়ে ঘরবাড়ি বানাই, আমরা কি চিন্তা করি কোথায় বানাচ্ছি? বানিয়ে চলে গেলেন, নদী ভেঙে নিয়ে গেল। এটা ঠিক না। তার ধারণা যে, সমন্বয় করতে হবে। নদীর চরিত্র বুঝতে হবে। জেনেশুনে নির্মাণ করতে হবে।’

এম এ মান্নান বলেন ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, মুন্সীগঞ্জে দেখা যায় টিনের বাড়ি দোতলা। সুন্দর সুন্দর একতলা, দোতলা। কারণ, তারা পদ্মার পাড়ে বাস করত। পদ্মা ভাঙার সময় আসলে তারা উঠিয়ে আরেক জায়গায় বসিয়ে দিতে পারবে। তিনি আমাদের মডেল উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, কলেজ- যেগুলো গাঙ্গের পাড়ে, নদীর পাড়ে হুমকির সম্মুখীন- সেগুলো আমরা যেন তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিতে পারি।’ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চিঠি দেবে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

এদিকে সব টোল বসানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে (প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে) মন্তব্য এসেছে, সড়কে টোল বসানোন জন্য। টোল সংযোজিত হবে। আমাদের রাস্তা বানাতে হবে, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, মেরামত করতে হবে। মেরামত না করলে আপনারা সবাই বিরক্ত হন। কিন্তু মেরামতে টাকা লাগে তো। সুতরাং টোল করে সামান্য টাকা চাঁদা দিয়ে যাবেন। এটা উনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, এটা বোধহয় ফ্রি হওয়া ঠিক নয়। আমি তার সঙ্গে শতভাগ একমত।’

গতকাল একনেকে উত্থাপিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্পের মধ্যে সড়কের দুটি প্রকল্পে দুটি ডাকবাংলা নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। তবে সেই দুটো ডাকবাংলা প্রকল্প থেকে বাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সড়কের প্রকল্পে ডাকবাংলো নয়। ডাকবাংলোর প্রয়োজন হলে সারা দেশে কতগুলো ডাকবাংলো লাগবে, সেটার জন্য আলাদা প্রকল্প আনতে বলেছেন তিনি।

এদিকে দেশে আর সুইস গেট নির্মাণ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারেস্টিং একটা অনুশাসন আছে। আমি তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এই যে সøুইস গেটের জন্য আমার এলাকার মানুষও অস্থির হয়ে যায়। তার (প্রধানমন্ত্রীর) অভিজ্ঞতা, বৃহদাংশ সুইস গেট কাজ করে না। এগুলো নামলে উঠে না, উঠলে নামে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড বানিয়ে চলে যায়, কিন্তু এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যথাযথ সমীক্ষা নেই। তার আরেকটা পর্যবেক্ষণ, ইতোমধ্যে আমাদের দেশে পানির প্রবাহ কমে গেছে আগের তুলনায়। ফারাক্কা বাঁধ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে এখন কম পানি যায়। মাঝে মাঝে শক্তিশালী বন্যা হয়ে যায়। সাধারণত কম পানি আসে। সুতরাং সুইস গেট বিশেষ দরকার নয় বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে সমীক্ষার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। বিবিএস পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘উনারা গবেষক মানুষ, গবেষণা করেন। আমি তাদের সঙ্গে বাহাসে যাব না, এটা তর্কের বিষয় নয়। বিবিএস আমাদের নির্ভরযোগ্য সংস্থা। তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের কাজে আমাদের আস্থা আছে। তারা যে তথ্য দিয়েছে, সেটার ওপর আমরা সম্পূর্ণভাবে আস্থাশীল। আমরা মনে করি, এটাই যথাযথ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা যেহেতু সাময়িক হিসাব, তাই পরবর্তীতে পর্যালোচনা করে এর চেয়ে বেটারও হতে পারে। আমরা সংস্থাগুলোকে সম্মান করি। তারা আরও গবেষণা করুক। আমরা পড়ব, দেখব। তবে আমরা জেনেশুনে আমাদের কাজ করছি।’