হুমায়ুন কবীর মানিক: শীত কিংবা গরম যে কোনো আবহাওয়ায় এখানে সমাগম ঘটে সব বয়সী মানুষের। স্বচ্ছ জলাধারের পাশে নিঝুম ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশে বসে মনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে অনেকেই খুজে নেন স্থানটি। দেশি ও অতিথি পাখির জলকেলি দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন ধুম নদীর পাড়ে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নদী ধুম। এ নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীকে কাছে টানে। হারাগাছ পৌর শহর থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ও কাউনিয়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ধুম নদীর অবস্থান। তিস্তা নদীর সঙ্গে এর সংযোগ ছিল। অনেকের কাছে ‘ধুমের বিল’ নামেও পরিচিত এটি। নদীর পাশে ‘ধুমের কুটি’ নামে একটি গ্রাম রয়েছে। দীর্ঘদিন হাজারো মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস ছিল এ নদী।
স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অন্যতম গোপন আখড়া গড়ে উঠেছিল এ নদী ঘিরে। সে আমলে দেবী চৌধুরানী ছিলেন ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের একজন অগ্রনায়িকা। মন্থনা ও ব্রাহ্মণডাঙ্গার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ দেবী চৌধুরানীকে বিয়ে করেন। সাংসারিক জীবনে অসুখী ছিলেন দেবী চৌধুরানী। শাশুড়ি তাকে নির্যাতন করতেন। ক্ষোভে-দুঃখে তাই স্বামীগৃহ ত্যাগ করেন তিনি। এরপর ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক ভবানী পাঠক তাকে কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিদ্যায় তাকে প্রশিক্ষণও দেন ভবানী পাঠক। এরপর দেবী চৌধুরানী ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। ধুম নদীর মাঝখানে তিনি গড়ে তোলেন গোপন আস্তানা। তখন এ এলাকা ছিল জনমানবহীন।
ধুম নদীটি মূলত ইউ বা অশ্বখুরাকৃতির। তবে বর্তমানে বেশ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে ধুম। দূষণের শিকার এ নদী। প্রায়ই ময়লা-আবর্জনায় ভরা থাকে এটি। এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া বিড়ি কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য মিশছে ধুমে। এ ধরনের বর্জ্য যেন পানিতে না মেশে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত।
এরশাদ সরকারের আমলে তৎকালীন মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম ধুম নদীকে একটি পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এলাকাটিকে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনারও চেষ্টা করেন। তবে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
এখানে বেসরকারি উদ্যোগে একটি চিড়িয়াখানা গড়ে উঠেছিল। এখন তাও বন্ধ। চিড়িয়াখানাটি চালুর উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তাহলে নদী আর চিড়িয়াখানা মিলে গড়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
বিশাল বিশাল ঢেউ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, পানকৌড়ির ডুবে ডুবে মাছ শিকারের দৃশ্য দেখতে ঘুরে আসতে পারেন ধুম নদী থেকে।
রংপুর
Add Comment