ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। সেতুর সৌন্দর্যবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট কিছু কাজ চলছে বর্তমানে। আগামী ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। তবে নদী শাসনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। চুক্তির মেয়াদ শেষে আরও তিন দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। আরও ১০ মাস সময় নিয়েছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) তা অনুমোদন করে।
তথ্যমতে, নদী শাসন প্যাকেজের চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চার বছরে এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। সে হিসাবে নির্ধারিত সময় শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে তা বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। তবে বর্ধিত সময়শেষে নদী শাসনের কাজ হয়েছিল ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছর সময় দেয়া হয় সিনোহাইড্রোকে। নতুন হিসাবে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে নদী শাসনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে করোনার কারণে সে লক্ষ্যমাত্রাও পূরণে ব্যর্থ হয় সিনোহাইড্রো। এতে আরও এক বছর সময় নেয় কোম্পানিটি, যা শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ জুন। যদিও গত মে পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজ হয়েছে ৯৩ শতাংশ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী শাসনের কাজ শেষ করতে আগামী বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নিয়েছে কোম্পানিটি। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ইউরোপ থেকে মালামাল আমদানি বিঘ্নিত হওয়া এ বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি।
জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রধান দুই প্যাকেজের (মূল সেতু ও নদী শাসন) নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই দফা করে সময় নেয়। সর্বশেষ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য ইউরোপ থেকে বিভিন্ন মালামাল আমদানি বিঘ্নিত হয়। আশা করা যাচ্ছে, এপ্রিলের আগেই নদী শাসনের অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে।
সূত্রমতে, নদী শাসন প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ছিল আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সাত হাজার ৬৫৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা চুক্তিমূল্যের ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এর আগে ২০২০ সালে নদী শাসনের কাজে অনুমোদনহীন উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। সে সময় বলা হয়েছিল, নদী শাসনের আওতায় ড্রেজিং ছাড়াও ফেলা হয় বালিভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ, পাথর, সিসি ব্লক ইত্যাদি। তবে এ কাজে অনুমোদনহীন জিও টেক্সটাইল উপকরণ ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও সেতু কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের কাজে বিলম্বের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের পুরোনো দুর্নাম রয়েছে। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ৭টি প্যাকেজের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে কোম্পানিটি। ওই প্রকল্পে মোট ১০ প্যাকেজের মধ্যে অপর তিন প্যাকেজের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হলেও সিনোহাইড্রোর অংশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়াতে হয়েছিল। বাস্তবায়ন বিলম্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ব্যয় তিন দফা বৃদ্ধি পায়।