নদ-নদীর নাব্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিন

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সারাদেশে ৩০৮টি নদী নাব্য হারিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শীর্ষক গ্রন্থের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আরও নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। প্রক্রিয়াটি চলমান বলেও জানান তিনি।

গবেষকদের তথ্যমতে, দেশে নদীর সংজ্ঞা, নদ-নদীর সংখ্যা কোনোটিই সঠিক নয়। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন প্রক্রিয়া চলমান। তবে যত দ্রুত সম্ভব, নদ-নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন আবশ্যক। এটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে নদী দখলদারদের আশকারা দেবে বলেই ধারণা। গতকালও একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছেন  ঠাকুরগাঁওয়ের ভক্তি নদীর অস্তিত্বই নেই; আছে কেবল সাইনবোর্ডে লেখা নাম। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় ভক্তি নদীর নাম নেই। জেলা প্রশাসনের কমিটিও নদীটির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এটি এখন ফসলি মাঠ, সব জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইনবোর্ডেই রয়ে গেছে নদীর নাম।

আবহমানকাল থেকেই নদী বাংলাদেশের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। যাতায়াতের সুবিধা থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীতীরে। আমাদের প্রায় সব প্রধান শহর, নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্র বিভিন্ন নদীতীরে গড়ে উঠেছে। নদী কেবল আমাদের প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করেনি, সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও এটি উঠে এসেছে প্রবলভাবে। নদীকে ঘিরে রচিত কবিতা, গান, উপন্যাস, চলচ্চিত্র অনেক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও খ্যাতি অর্জন করেছে নদীবহুল অঞ্চলের লোকগীতি ভাটিয়ালি।

যে নদী আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করেছে, সেই নদী রক্ষায় আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনি। যখনই কোনো নদীর তীর ভেঙে দু’পাশের ফসলি জমি, ঘররাড়ি নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে; তখনই আমরা সাময়িক সচেতন হই। কিন্তু নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে; দখলদারদের বিরুদ্ধে শূন্যসহনমীলতায় কঠোর ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। তাহলে নদী বাঁচবে কী করে!

ভাঙনে বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার পরও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে নদীর অবদান অনস্বীকার্য। নদীভাঙন কিংবা নদী দখল সমস্যা একদিনের নয়, নদীতে পানিপ্রবাহ ঠিক রাখা এবং দখল রোধ করা গেলে নদীর নাব্য রক্ষা অসম্ভব নয়। নদীর দূষণ ঠেকানোর দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এভাবে নদী রক্ষায় জড়িত ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। নদীর অবৈধ দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে আছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন। নদীভাঙন রোধে এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি। নদীতীরে অপরিকল্পিত স্থাপনা, বাঁধ প্রভৃতির কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হলেই রণমূর্তি ধারণ করে নদী। তা নিয়েই আমাদের মাতামাতি কিন্তু নদী যে মরে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আমাদের উদাসীনতা দুঃখজনক। ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-বর্জ্য মিশছে সেখানে। উজান থেকে নেমে আসা পলি পড়ছে নদীতে। এতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।  নদীতে যত বাঁধ দেয়া আছে, সেগুলো নদীকে সরু করে দেয়। এটিও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ময়লা-বর্জ্য ফেলা বন্ধের পাশাপাশি নদী খননের ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০