কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার কুমার নদী, দৌলতপুরের মাথাভাঙ্গা ও হিসনা, ভেড়ামারার চন্দনা, কুমারখালীর ডাকুয়া ও কালী, খোকসার সিরাজপুর হাওর এবং মিরপুরের সাগরখালী নদী দখল, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া এবং পলি পড়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘কুষ্টিয়ায় দখলে অস্তিত্ব সংকটে ৮ নদী’ শীর্ষক প্রতিবেদনে রয়েছে এসব তথ্য।
আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নদী দখল করে বাড়ি, মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। কোথাও বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্রোতধারা। প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রভাবশালীরা নদীতে গড়ে তুলছেন স্থাপনা। নদীকে আবাদি জমিতে পরিণত করছে স্থানীয়রা। ভরাট নদীগুলো দ্রুততম সময়ে দখলমুক্ত ও খনন না হলে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটবে বলে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন।
প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে এ অঞ্চলের নদীগুলোর অবদান। নদী এখানে ছড়িয়ে আছে জালের মতো। তাই বলা চলে, নদী দখল করে নদীমাতৃক বাংলার প্রাণসূত্রকেই হত্যা করা হচ্ছে। খাল দখল করে কী ফল পাচ্ছি আমরা, তা সবার জানা। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রাজধানী ও মহানগরীগুলো জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়। দেশে নদীগুলোর ভূমিকা অনেকটা সেরকম। দখল করে, বর্জ্য ফেলে নদীগুলো সরু করে ফেলায় আগের মতো পানি ধারণ করতে পারে না সেগুলো। সময়-অসময়ে ধ্বংসাত্মক বন্যার এটি বড় কারণ। স্থানীয় বৃষ্টি বা উজান থেকে আসা পানি নদী উপচে ভাসিয়ে দিচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ, ফসলিজমি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যাহত দখলেরই অনিবার্য পরিণতি নদীর এ বিধ্বংসী রূপ। এ ধরনের বন্যাকে তাই ‘মনুষ্যসৃষ্ট’ বলেন তারা।
একসময় দেড় হাজারের মতো উপনদী, শাখা নদী ও খাল ছিল এদেশে। এখন ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নদী রয়েছে। এগুলোর মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। চাষাবাদের জন্য পানির বড় উৎস এসব নদী। পণ্য পরিবহন পথ হিসেবেও নদীর ভূমিকা রয়েছে। নদী মিঠাপানির মাছের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কয়েকটি নদী ইলিশের বিচরণক্ষেত্র। জনসাধারণের এক বড় অংশের প্রধান জীবিকা মৎস্য আহরণ ও এ-সংক্রান্ত ব্যবসা। নদীগুলো প্রতিবছর প্রায় ২৪০ কোটি টন পলি বঙ্গোপসাগরে ফেলে। এর ফলে সমুদ্রমুখ বরাবর প্রায়ই গড়ে উঠছে নতুন ভূমি।
একসময় নৌযোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। নদীবন্দরগুলো ছিল ব্যস্ত। নদীপথে পণ্যপরিবহন এখনও সাশ্রয়ী। কিন্তু নাব্য রক্ষায় নেওয়া ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। নদী ও নৌপথ যথাযথ গুরুত্ব পেলে নদী রক্ষা ও এর সংস্কার গুরুত্ব পেত। দখলকেও প্রশ্রয় দেওয়া হতো না।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নাব্য রক্ষা ও পাললিকীকরণ, সেচব্যবস্থা এবং নদীর তীর সংরক্ষণে জরিপ পরিচালনা ও ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করে নদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আমাদের আছে দুটি মন্ত্রণালয়Ñপানিসম্পদ ও নৌপরিবহন। এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত কার্যক্রম নদী দখল রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলেই আমরা মনে করি। বন্যা প্রতিরোধ, মাছের অভাব পূরণ, সেচ ও পরিবহন ব্যবস্থা তথা অর্থনীতিতে অবদান বিবেচনা করেও নদীগুলো রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
Add Comment