মান্না আতোয়ার, বগুড়া: এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নাগর নদের পানিতে বন্যা দেখা দিয়েছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায়। এতে ফসলের জমি, পুকুর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কৃষি অফিস বলছে, বন্যায় উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমির আমনের চারা ডুবে গেছে। কিন্তু সেই পরিসংখ্যান কৃষকের কাছে কয়েকগুণ বেশি।
জানা গেছে, উপজেলার নাগর নদ দিয়ে ও দৈয়নার খাল ধসে ফসলের মাঠ এবং বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলার নামুইট, কাথম, চাকলমা, বাদলাশন, কৈগাড়ী, দামগাড়া, নিজামদকুড়ি, ঢাকইর, দমদমা, চাতরাগাড়ি, নাগরকান্দি, কালিয়াগাড়ী, রুস্তমপুর, মূলকুড়িসহ ২৫ গ্রামের বিভিন্ন মাঠে আমন ধান ও বীজতলা ডুবে গেছে। শতাধিক পুকুরসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোও ডুবে গেছে।
এলাকার চারদিকে এখন পানি থৈথৈ করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার খানেক পরিবার। এছাড়া ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকন্দি থেকে বৃষ্ণপুর, কালিয়াগাড়ী থেকে চাতরাগাড়ী, উমাপতিদীঘি ও পার-নাগরকান্দি রাস্তা ডুবে গেছে, বাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ; পানির নিচে আমন ধান, সবজির ক্ষেত ও বীজতলা। এদিকে ভাটগ্রাম ও বুড়ইল ইউনিয়নের ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি। এ কারণে অনেক কৃষক সেচপাম্প চালু করে ক্ষেতে আমনের চারা রোপণ করেন। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশে আমনের চারা রোপণ শেষ হয়েছে, কিন্তু চারা রোপণের পর কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার মাঠঘাটে এখন থৈথৈ পানি। ডুবে গেছে আমনের চারা ও বীজতলা। এছাড়া বন্যায় পানিবন্দি মানুষ তাদের গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন।
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মাছুম জানান, তার ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা এখন পানিতে ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানির নিচে আমন ধান ও বীজতলা। প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি।
দমদমা গ্রামের পানিবন্দি নাসরিন বেগম, মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অনেকে জানান, এখন বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। তারা আতঙ্কে আছেন। তাদের কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না। পানি বের হওয়ার নালাগুলো প্রভাবশালীরা ভরাট করে ভবন বানিয়েছে। প্রভাবশালীদের কারণে এখন ভারী বৃষ্টি হলেই তাদের বাড়িতে পানি ওঠে, ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। তারা আরও বলেন, এই বন্যার কারণ প্রশাসন দেখেও নালা উদ্ধারে কোনো ভ‚মিকা রাখেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক জানান, কয়েক দিনের টানা বর্ষণে উপজেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমির আমন চারা তলিয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিতে এটি বন্যা নয়। এটি তেমন ক্ষতির কারণ হবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
নন্দীগ্রামে বন্যায় তলিয়ে গেছে ২৫০ হেক্টর আমন চারা
