গতকালের পর
নবজাতকের নাভির যত্ন : নবজাতকের নাড়ি জীবাণুমুক্তভাবে সঠিক পদ্ধতিতে কাটতে হবে, সঠিক পদ্ধতিতে বাঁধতে হবে। নাড়ি কাটার পর নাড়িতে ৭ দশমিক ১ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন দিতে হবে। এর বাইরে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া নাভিতে কোনো কিছু দেয়া বা লাগানো উচিত নয়। সচরাচর শিশু ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার এক-দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে নাভি শুকিয়ে ঝরে যায়। এক মাসের পরও যদি তা না ঝরে, তবে নাভির সংক্রমণ বা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।
যেসব লক্ষণে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
ক. বুকের দুধপানে অসুবিধা: খ. জ্বর বা অতিরিক্ত শীতল দেহ; গ. শ্বাসকষ্ট (শান্ত অবস্থায় শ্বাস হার যদি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি থাকে, যদি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকের নিচের অংশ দেবে যায়, বা ঘোঁৎ ঘোঁৎ সাঁ সাঁ শব্দ হয়); ঘ. অনবরত বমি, বমিতে রক্ত বা পিত্তরস; ঙ. পেট ফোলা, ফ্যাকাশে ভাব; চ. হাত-পা পর্যন্ত বিস্তৃত জন্ডিস, রক্তপাত; জ. খিঁচুনি ও ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া। এসব উপসর্গ দেখা দিলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিস: জীবনের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৬০ শতাংশ পূর্ণ গর্ভকাল পাওয়া (টার্ম) নবজাতক ও ৮০ শতাংশ অকালপ্রজ (প্রিটার্ম) নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। এসব জন্ডিসের বেশিরভাগ ফিজিওলজিক্যাল বা নির্দোষ। ৫ শতাংশ প্যাথলজিক্যাল বা রোগ-সংশ্লিষ্ট জন্ডিস।
নির্দোষ জন্ডিস সাধারণত ভূমিষ্ঠ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর দেখা যায়। এই জন্ডিসে বিলিরুবিন মাত্রা ১৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকে। শিশু যদি সুস্থ স্বাভাবিক থাকে, ভালোভাবে মাতৃদুগ্ধ পান করে, তবে টার্ম নবজাতকের পাঁচ-সাত দিনের মাথায়, প্রিটার্ম নবজাতকের দুই সপ্তাহ বয়সের দিকে আপনা-আপনিই তা সেরে যায়।
সব নবজাতককে প্রথম ৭২ ঘণ্টা বয়সে জন্ডিস দেখা দিয়েছে কি না, তা যাচাই করে নিতে হবে। শিশুর ত্বক, চোখ ও হাত-পা সূর্যের আলোয় পরীক্ষা করলে তা বোঝা যায়। জন্ডিস হয়েছে মনে হলে অবশ্যই ল্যাব টেস্ট করে বিলিরুবিনের মাত্রা নির্ণয় করা উচিত। বিশেষত তিন দিন বয়সে। নবজাতকের জন্ডিস প্রতিরোধে গর্ভাবস্থায় মায়ের এবিও এবং আরএইচ রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা ছাড়াও যথাযথ অ্যান্টিনেটাল কেয়ার গ্রহণ করা উচিত। [চলবে]
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ