গতকালের পর
নবজাতকের জন্ডিস দেখা দিলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। নবজাতককে রোদে দিয়ে জন্ডিস কমানোর পুরোনো ধারণা ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। যেসব নবজাতক মারাত্মক জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে ও চিকিৎসা পেয়েছে, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, বিশেষ করে কানে শোনা ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ যথাযথ হচ্ছে কি না, দেখা উচিত।
কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর যত্ন: যাদের জন্মকালীন ওজন আড়াই কেজির কম থাকে, তাদের লো বার্থওয়েট বা স্বল্প জন্ম ওজনি নবজাতক বলা হয়। এরা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ শিশু আর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। এসব নবজাতকের যত্ন স্বল্প জন্ম ওজনি নবজাতকের সব চিকিৎসাব্যবস্থা প্রদানের সুবিধা থাকে, এমন কেন্দ্রে নেয়া উচিত। বিশেষত যেসব নবজাতকের জন্ম ওজন ১৮০০ গ্রামের কম, গর্ভকাল ৩৪ সপ্তাহের কম, অসুস্থ বা মায়ের দুধ পানে অসমর্থ। কমপক্ষে ১২ মাস বয়স অবধি এদের ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন জোগানো দরকার। ক্যাঙারু কেয়ার পদ্ধতিতে নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রার সুরক্ষা দিতে হবে। বিশেষত হাসপাতাল ছাড়ার পর বাড়িতে যখন তাকে নেয়া হবে। বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি এবং নানা অসুখের জটিলতা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কমপক্ষে ১২-১৮ মাস বয়স পর্যন্ত এই ফলোআপ চালিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ যত্ন: মা হেপাটাইটিস সারফেস অ্যান্টিজেন পজিটিভ হলে শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন ও হেপাটাইটিস-বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে। মা যদি আরএইচ নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের হন, তবে ভূমিষ্ঠকালীন নাড়ির রক্ত শিশুর রক্তের গ্রুপ ও অ্যান্টিবডি শনাক্তের জন্য পাঠাতে হবে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের নবজাতক শিশু, প্রিম্যাচিওর বেবি অথবা অসুস্থ শিশুর রক্তের গ্রুকোজ জন্মের পর পর মাপতে হবে। গ্রুকোজ মান ৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকলে হাইপোগ্লইসেমিয়ার চিকিৎসা দিতে হবে।
হাসপাতালে থাকার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জেনেটিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করা ভালো। উল্লেখ্য, থাইরয়েড হরমোন ও আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ ‘কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম’ নিয়ে অসংখ্য শিশু প্রতি বছর আমাদের দেশে জš§ নিচ্ছে। অকারণ মৃত্যুরোধে নবজাতককে পিঠের ওপর বা একটু ডান দিকে কাত করে, শক্ত বিছানায় শোয়ানো উচিত। নরম তুলতুলে বিছানায় শোয়ানো হলে এক বছরের কম বয়সী শিশুর উল্টে গিয়ে শ্বাসরোধ পরিস্থিতির মতো বিপদের ঝুঁকি থাকে। [শেষ]
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ