নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার দুপুরে স্ব-স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতার আবেদন জমা দেন তারা। এ সময় দুই প্রার্থীর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক থাকলেও তাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি বলে দাবি করেন তারা।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আতিক বলেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আর ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনার আশা রেখেছেন তাপস।
এদিকে নবসূচনা করতে চান তাপস। বেলা সোয়া ১২টার দিকে গোপীবাগের ৮নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, তাপসের ভাই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ অনেক কর্মী-সমর্থক ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাপস। তিনি বলেন, ‘আশা করি আগামী বছর ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করতে পারব। আমাদের অনেক করণীয় রয়েছে। প্রথমত, দীর্ঘদিন ঢাকাবাসী যেসব নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত-অবহেলিত, সেটাকে আমরা মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করব। যদি ঢাকাবাসী আমাকে জয়ী করেন, সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে ঢাকাবাসীর মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করাই হবে আমার প্রধান কাজ।’
বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে পাশে দেখা যাচ্ছে না সাংবাদিকদের এ কথার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তম সংগঠন, কেউ এর বাইরে নন। সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করব। বিশেষ করে আমি ঢাকাবাসীর পক্ষে সব সুশীল সমাজ, ঢাকা নিয়ে যারা চিন্তা করেন, নাগরিক সুবিধা নিয়ে যারা চিন্তা করেন, আপামর জনগণ সবাইকেই আমি আহ্বান জানাব, এ সুযোগটাই আপনারা কাজে লাগাবেন। আমাকে পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনাদের সেবক হিসেবে নির্বাচিত হলে প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।’
নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা-১০ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। তারা আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করে রেখেছেন। আমি সুযোগ পেয়েছি তাদের সেবা করার। তারাসহ ঢাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ চেয়েই মেয়র পদে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশা করি আমার দক্ষতা, যোগ্যতা, পূর্বের অভিজ্ঞতা ও কাজকে বিচার-বিশ্লেষণ করেই লোকজন আমাকে সুযোগ দেবে।’
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনের (ইটিই) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে। এ সময় নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে আতিকের সঙ্গে কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন পাঁচজনের বেশি সমর্থক। ভবনের বাইরেও ছিল কর্মী-সমর্থকের বিশাল বহর।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এক প্রশ্নে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনো শোডাউন করে আসিনি। বাইরে যখন তা দেখেছি, সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া এখানে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও এসেছেন। তাদের মধ্যেই আমাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কেউ হারবে, কেউ জিতবে এটাই বাস্তবতা। আমি এর আগে বিজিএমইএ নির্বাচন করেছি; কিন্তু মাঝপথে গিয়ে ভোট বর্জন করিনি।’
বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলে অভিযোগ করেÑএ প্রসঙ্গে আতিক বলেন, ‘এক দল বললে কিন্তু হবে না, সবাই মিলে বলতে হবে। কেউ যদি প্রথম থেকেই বলে আমরা মাঠে থাকতে পারব না! এসব তারা কীভাবে বলে এটি আমার প্রশ্ন।’
পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে সবার সহযোগিতায় ডেঙ্গু নির্মূল করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে ক্যাসিনোবাজ কাউন্সিলরদের কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আতিক।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উত্তরের সাবেক মেয়র বলেন, ‘জনগণের ভোটেই আমরা জিতব। নৌকার কোনো ব্যাক-গিয়ার নেই। নৌকা এগিয়ে চলবে। আমার বিশ্বাস, নির্বাচনে জয়ী হব।’