নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার হাতিয়ার হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের মধ্যে সারা বিশ্বই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশেরও উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির রোডম্যাপ করে কাজ করা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দিনব্যাপী এক সম্মেলনে নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০’ শীর্ষক সম্মেলনে নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে নীতিগত সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এখন তা ৪৮৫ বিলিয়ন ডলার-প্রায় পাঁচগুণ। ওই সময়ের তুলনায় এখন আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি পাঁচগুণ হয়েছে। এ জন্য সরকারকে ৮ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই আট বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি না দিলে আবার আমাদের জিডিপির আকারও এতটা বাড়ত না।
তিনি বলেন, আমরা কেন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব তা সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ, কর্মসংস্থান, জ্বালানি সাশ্রয় কতটা হচ্ছে বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হয় আর আমরা যদি পরিবেশ দূষণ করি ৮ শতাংশ, তাহলে আমাদের জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। আমাদের এমন উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে হবে যা টেকসই হবে।
সম্মেলনে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য তানভির শাকিল জয় বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সারা বিশ্বের মতো আমরাও জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে চিন্তিত। সরকার ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তারে কাজ শুরু করেছি। একে আরও গতিশীল করার আহ্বান জানান তিনি।
তথ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এর বাইরে জাতীয় নিরাপত্তা, নাগরিকদের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। প্রযুক্তিগত সীমিত সামর্থ্য, সমন্বয়ের অভাব এবং গ্যাস মজুতের ঘাটতির মতো চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
এখন শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি কার্যকর করা সম্ভব, যা এক সময় অসম্ভব ও ব্যয়বহুল বলে মনে করা হতো। তাই এখন জ্বালানি মিশ্রণ নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন এবং কতটুকু জ্বালানি নবায়নযোগ্য বা পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে আসা উচিত তাও আলোচনায় আসতে হবে।
অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত প্রকল্পে ৫-৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের জীবন বাঁচাতে জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার বেশিরভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে মেটানো হয়। এর প্রবৃদ্ধির জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর জোর দেন তিনি।
এছাড়া সম্মেলনে ব্রাইট গ্রিন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন দীপল চন্দ্র বড়ুয়া, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর সমন্বয়কারী শরীফ জামিল, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন।