নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে সমঝোতার কাছাকাছি আছে বাংলাদেশ। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এ বিষয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। তবে এখনও বেশ কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ কেনার আগে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এজন্য দক্ষ জনবল দরকার। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুবই দুর্বল এবং গবেষণায় পিছিয়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত ‘ক্রস বর্ডার এনার্জি ও ট্রেড অপরচুনিটিজ’শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল শুক্রবার এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ও বাংলাদেশ সৌর বিদ্যুৎ সমিতির (বিএসইএস) যৌথভাবে আয়োজিত জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সবুজ মেলা’ শীর্ষক মেলায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। চার দিনব্যাপী এ মেলায় খাত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনার্জি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক।
নসরুল হামিদ বলেন, খাতের উন্নয়নে এখন অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে চার হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। এখন এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) সবচেয়ে বেশি হয়েছে জ্বালানি খাতে। আগামীতে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা করা হচ্ছে। সেজন্য এক বিলিয়ন ডলারের পাওয়ার ও এনার্জি বন্ড ছাড়া হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২৫০ একর অকৃষি জমির প্রয়োজন হয়, যা আমাদের নেই। তাছাড়া আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ও ভালো গ্রিড নেই। ফলে প্রচুর বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশনে অপচয় হয়ে যায়।
গ্যাস আমদানির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে গ্যাস আসা শুরু হবে। এক্ষেত্রে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট কঠিন। এখন গ্যাসের ওপর ৪০ শতাংশের বেশি সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি দিতে হচ্ছে। এটা কমানো দরকার। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদের পরিচালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য নাহিন রাজ্জাক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম, আইইবির টেক্সটাইল ডিভিশনের সভাপতি ইঞ্জি. শফিকুর রহমান, ইন্টারন্যাশনাল এনার্জির প্রধান খন্দকার আবদুস সালেক সুফী, পাওয়ার সেলের ডিরেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ হোসেন, শ্রেডার চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, জার্মান প্রতিষ্ঠান নেগাওয়াটের উদ্যোক্তা ম্যাথিউস গেলবার প্রমুখ অংশ নেন।
সংসদ সদস্য নাহিন রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এখনও বাড়তি চাহিদার জন্য প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি জরুরি। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সব আলোচনায়ই সম্ভাবনা আর সহযোগিতার কথা আলোচনা হয়। অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্য শুরু করেছে। মিয়ানমার থেকে কম্বোডিয়া ও চীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। আমরাও সীমান্ত পেরিয়ে বাণিজ্য শুরু করতে পারি। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে উত্তর-পূর্বের প্রদেশগুলোতে ১০ গিগাবাইট গতির ইন্টারনেট আমদানির জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা ভারতের ওই রাজ্যগুলোতে ইন্টারনেট রফতানির বিপরীতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারি। নেপাল ও ভুটানের বিদ্যুৎও আঞ্চলিক গ্রিডের মাধ্যমে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, আঞ্চলিক পর্যায়ে সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাণিজ্য করতে গিয়ে একটা দ্বিধা আছে। তা হলো, অনেকে মনে করেন এর মাধ্যমে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে পরস্পর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করতে হবে। ভারতের পূর্ব দিকের রাজ্যগুলোতে উৎপাদন হওয়া বিদ্যুৎ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রাজ্যগুলোতে যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হবে ভারত। আবার বিপরীত দিকে নেপাল ও ভুটানের বিদ্যুৎ ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হবে। এক্ষেত্রে ভারতের ওপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল হবে। এরূপ পরস্পর নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই বাণিজ্যের অগ্রগতি হতে পারে।
জার্মান উদ্যোক্তা ম্যাথিউস গেলবার বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাণিজ্য করতে হলে আন্তরিক ক্রেতা ও বিক্রেতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভালো অবকাঠামো ও মূল্যের ক্ষেত্রে সমঝোতা জরুরি। প্রত্যেক দেশের উচিত জ্বালানি খাতে নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আগ্রহী করা দরকার।
Add Comment