নবায়ন না করায় ৩৫ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় ব্যবহৃেত বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেননি ৩৫ হাজার বিনিয়োগকারী। শেয়ার হিসাব সংরক্ষণকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) কর্তৃক নির্ধারিত বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের শেষ সময়সীমা ছিল গত ৩০ জুন। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করা বিও অ্যাকাউন্টগুলো এখন বাতিল হয়ে গেছে।  সিডিবিএল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, অনেক ব্রোকারেজ হাউজ এখনও নবায়ন না করা পূর্ণাঙ্গ বিও’র তালিকা সিডিবিএলে পাঠায়নি। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। মূলত আইপিও বা প্রাইমারি মার্কেটে বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় এসব হিসাবধারী নবায়নে আগ্রহী হননি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে সিনথিয়া ব্রোকারেজ হাউজের কমপ্লায়েন্স অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এক সময় আইপিও বিজয়ী বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি বিও থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কিংবা তার বেশি লাভ করতে পারতেন। সে কারণে একজন গ্রাহক বিভিন্ন নামে অনেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতেন। এখন সে সুযোগ নেই। যার প্রতিফলন পড়েছে বিও নবায়ন না করায়।’

এদিকে নিয়মানুযায়ী জুনের মধ্যে বিও ফি পরিশোধ না করলে সে সব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে এ বছর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। অনেক বিনিয়োগকারী মে মাসেই তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার তথ্য হাউজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে মে মাসেই বাতিল হয়ে গেছে প্রায় সাত হাজার বিও অ্যাকাউন্ট।

সিডিবিএলের দেওয়া তথ্যমতে, গত এপ্রিলে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৮টি। জুনের শেষে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৩২টি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিও নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের ২৫ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। এরপরই হাউজগুলো থেকে বিও হিসাব বন্ধের তালিকা পাঠানো শুরু হয়। আর সর্বশেষ হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৩২টি। বর্তমানে যে সচল বিও রয়েছে, এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩টি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৯টি এবং বিভিন্ন কোম্পানি ১১ হাজার ৪৯৮টি। এদিকে সচল বিও’র মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২১ লাখ ৩১ হাজার ৭৪টি। আর নারীদের বিও রয়েছে সাত লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৮টি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর প্রধানত দুই কারণে অসংখ্য বিও বাতিল হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি; অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। তবে এ বছর বিও বাতিল হওয়ার জন্য প্রাইমারি মার্কেটের নাজুক পরিস্থিতিকে দায়ী করেন তারা। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে রাকিব মোল্লা নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিভিন্ন নামে আমার মোট বিও ছিল ২৫টি। এর ২৩টি ব্যবহার হতো আইপিওতে আবেদন করার জন্য। কিন্তু প্রাইমারি মার্কেট ভালো না থাকায় এবার ১৩টি অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শেয়ারে আবেদন না করে শুধু শুধু অ্যাকাউন্ট রেখে কোনো লাভ নেই। বরং প্রতি বছর ৫০০ টাকা করে ফি গুনতে হয়। এটা বাড়তি খরচ।’

একই কারণে বিও নবায়ন করেননি তার মতো আরও অনেক বিনিয়োগকারী।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।

২০১০ সালের পর থেকে নবায়ন না করায় প্রতিবছর লাখ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল হচ্ছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব অ্যাকাউন্ট।

তবে যেসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার আছে, অথবা টাকা জমা আছেÑওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০